ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যানজটে আটকে না থেকে অনলাইনে শপিং

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৮ মে ২০১৯

 যানজটে আটকে না থেকে অনলাইনে শপিং

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ উপলক্ষে জমে উঠেছে অনলাইনের কেনাকাটাও। প্রতিদিনই বাড়ছে অনলাইনে ক্রেতার সংখ্যা। যানজট এড়িয়ে যে কেউ কম্পিউটারের সামনে বসে করতে পারছেন কেনাকাটা। শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের চাহিদা মতো এখন পণ্য মিলছে অনলাইনে। ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, মহিলাদের শাড়ি দেশী কটন থ্রি-পিস, ইন্ডিয়ান স্টিচ-আনস্টিচ কটন, জর্জেট সালোয়ার কামিজ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা, ঘড়ি, স্টাইলিশ সানগ্লাস, জুয়েলারি, কসমেটিক, খাদ্যদ্রব্য, ওয়ালেট, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, টুপি, আতর, জায়নামাজ, বেল্টসহ কী নেই সেখানে? বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওই শপিং সাইটগুলোর প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ক্রেতারা ফেসবুক ব্যবহার করার সময় ওই সব অনলাইন বাজারের লিঙ্ক তাদের সামনে এসে হাজির হচ্ছে। অনেকেই ক্লিক করছেন তাতে। আর সেরে ফেলছেন কেনাকাটা। তাই ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে অনলাইনে কেনাকাটা। গত বছরের তুলনায় এ বছর তাদের ক্রেতা বেশ বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, মাত্র কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছিল ছোট-বড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসে ঘুরে ঘুরে ব্যতিক্রমধর্মী পণ্য খুঁজে বের করে কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদ শপিংয়ে নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে, মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল হলেই যে কেউ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শত শত পণ্য থেকে বাছাই করে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারছেন। শুধু তাই নয়, পণ্যটি সংগ্রহ করতে ক্রেতাকে এখন আর বিক্রেতার কাছে যেতেও হচ্ছে না, ইচ্ছে করলে ঘরে বসেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে নগরীর যানজট যেমন এড়ানো যায়, তেমিন ভোগান্তিও কমে অনেকগুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসের মতো অনলাইনেও কেনাকাটা জমে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ফারাহানা সুলতানার সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ব্যস্ততার কারণে শপিং করার খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যেতেও ইচ্ছা করে না। তাই অনলাইনে অর্ডার দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাই। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট থেকে গত সপ্তাহে চারটি থ্রি-পিস কিনেছেন তিনি। অনলাইনের আরেক ক্রেতা আবির মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অনলাইনের দুটি জনপ্রিয় সাইট থেকে ঈদের কেনাকাটায় এবার দুটি পাঞ্জাবি ও দুটি শাড়ি কিনেছি। বাসায় বসে অনলাইনে এসব কাপড় পরিবারের সবার পছন্দেই কেনা হয়েছে।’ জানা গেছে, দেশে দুই ধরনের অনলাইন সেবা চালু আছে। এক ধরনের সেবা পেতে আপনাকে পণ্য পছন্দ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আগে মূল্য দিতে হবে। পরে হাতে পাবেন পণ্যটি। অন্য সেবাটি হচ্ছে আপনাকে পণ্য পৌঁছে দিয়ে মূল্য নিয়ে যাবে। পণ্যভেদে কিছু পরিবহন খরচও আপনার কাছ থেকে নেবেন অনলাইন বিক্রেতারা। তবে পণ্যের দাম যত বেশি পরিবহন খরচও তত কম। অনলাইনে যেমন দেশের মধ্যে আপনি পণ্য কিনতে পারবেন তেমনি বিদেশেও পছন্দের পণ্য পাঠাতে পারবেন। ব্যাগ, ঘড়ি, জুয়েলারি যদি বন্ধুকে দিতে চান তাহলেও অনলাইনে তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ আছে। অনলাইন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে তাদের ঈদের পোশাক, জুয়েলারি, জুতা, ব্যাগ, কসমেটিকস প্রভৃতি পণ্যের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। তারা আরও জানান, সাধারণত কর্পোরেট শ্রেণীর মানুষ বেশি অনলাইনে কেনাকাটা করলেও এখন তা অনেক শ্রেণীর মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক ফ্যাশন ও বুটিক হাউস এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এবারে ঈদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের দেশী কটন থ্রি-পিস, ইন্ডিয়ান স্টিচ-আনস্টিচ কটন, জর্জেট সালোয়ার কামিজ। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, মহিলাদের শাড়ি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা, ঘড়ি, স্টাইলিশ সানগ্লাস, জুয়েলারি, কসমেটিক, খাদ্যদ্রব্য, ওয়ালেট, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, টুপি, আতর, খেজুর, জায়নামাজ, বেল্টসহ হরেক রকম পণ্য। আর গত ঈদের চেয়ে এবারে কেনাবেচা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানালেন অনলাইন শপিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে কথা হয় ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) সাধারণ সম্পাদক ও আপলিঙ্ক কসমেটিকসের কর্ণধার মোঃ আব্দুল আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ইন্টারনেটের প্রতি ঝুঁকছে। যার কারণে এখন গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরে বসে পণ্য কিনতে আগ্রহী। দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে অনলাইন ব্যবসা। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবারের প্রায় সব সদস্য অনলাইনে কেনাকাটা করেন। অনলাইন শুরুর দিকে প্রতারণার কিছু বিষয় ছিল। এখন এ্যাসোসিয়েশন হওয়ায় যারা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন এমন গ্রাহকরা প্রতারণার অভিযোগ করলে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। যার কারণে অনেকে ভরসা পাচ্ছেন অনলাইন কেনাকাটায়। বর্তমানে প্রায় লাখেরও বেশি পরিমাণে পণ্য প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। যার মূল্য কোটি টাকারও বেশি বলে জানান এ্যাসোসিয়েশনের এই নেতা। এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে ই-কমার্সের আওতায় প্রায় ৯শ’ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে জেলা শহরগুলোতেও গড়ে উঠেছে অনলাইন শপ। সর্বমোট দেশে প্রায় কয়েক হাজার অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান সংস্থাটির কাছে নেই। তবে দিন দিন অনলাইনের ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যান পেজের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এসব ছোট উদ্যোক্তার প্রধান মাধ্যম ফেসবুক। এর পাশাপাশি ই-কমার্সের সঙ্গে জড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ জানান, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে অনলাইন ব্যবসা। আর বিভিন্ন উৎসবে বেড়ে যায় অনলাইনে বেচাকেনার পরিমাণ। সবচেয়ে বড় বিষয়- অতিরিক্ত গরমে অনেকেই বাসায় বসে পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ কারণে ঈদে বাড়বে অনলাইনে ব্যবসার পরিমাণ। এই মুহূর্তে অনলাইনে প্রায় এক লাখ পিসেরও বেশি পণ্য প্রতিদিন ডেলিভারি হচ্ছে। আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় এবার অনলাইন বাণিজ্য দেড় থেকে দুই গুণ বাড়বে।
×