ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাহারি রং ও ডিজাইনের কারুকাজে চোখ জুড়িয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৮ মে ২০১৯

বাহারি রং ও ডিজাইনের কারুকাজে চোখ জুড়িয়ে যায়

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ বাহারি রং ও ডিজাইনের কারুকাজ মাটির তৈরি শখের হাঁড়িতে। হাতে নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয় মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র। কারুকাজে সমৃদ্ধ হাঁড়ি, সাজি, পক্ষসাজি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কড়াই, চুলা, ঢাকনা, সরা, পুতুল, পাখি, বাতিসহ নানান ধরনের হস্তশিল্পের তৈজসপত্র আজ বিলীন হওয়ার পথে। হস্তশিল্পে গড়া নানা জিনিসপত্র গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। সুশান্ত কুমার পাল মাটির বিভিন্ন শখের হাঁড়িসহ নানা ধরনের উপকরণ তৈরি করে আজও জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। তিনি ধরে রেখেছেন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও বিক্রি করছেন তার নিপুণ হাতের তৈরি মাটির জিনিসপত্র। দেখতে খুবই সুন্দর। নানা রঙে ঝিলমিল করে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। শৌখিন পরিবারগুলো বাড়ির শোভা বাড়ানোর জন্য বাহারি রং ও ডিজাইনের কারুকাজে ভরপুর তৈজসপত্রগুলো কিনে নিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন রাজশাহী পবার বসন্তপুরের বাসিন্দা সুশান্ত কুমার পাল। শুধু সুশান্ত কুমার পালই নয় তার ছেলেরাও এ শখের হাঁড়িসহ নানা হস্তশিল্পের তৈজসপত্র বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শখের হাঁড়ি তৈরির নিপুণ কারিগর ষাটোর্ধ সুশান্ত কুমার পাল তার বাপ-দাদার পেশা এটি। তিনি তার বাপ-দাদার পেশা এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন। ছোট বেলা থেকেই এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এ পেশায় আরও যোগ দিয়েছেন তার দুই ছেলে সঞ্চয় কুমার পাল ও মৃতুঞ্জয় কুমার পাল। এছাড়াও এ পেশায় আঁকড়ে ধরে আছেন তার মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল ও স্ত্রী মমতা রানী পালও। ছেলের স্ত্রীরাও এখন এ পেশায় ডুবে আছেন। পুরো পরিবার বাহারি রং ও ডিজাইনের কারুকাজে ভরপুর মাটি দিয়ে জিনিসপত্র বানানোর কাজে জড়িয়ে রয়েছেন। সুশান্ত কুমার পালের মতে এ হস্তশিল্প আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। শখের হাঁড়ি বানানো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে টিকিয়ে রাখতে হবে। সুশান্ত কুমার পাল বলেন, মাটি দিয়ে হাঁড়ি, সাজি, পক্ষসাজি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কড়ই, চুলা, ঢাকনা, পুতুল, পাখি, বাতিসহ প্রায় ৩০-৩৫টি আইটেমের জিনিসপত্র বানানো যায়। বিভিন্ন মেলায় এ হস্তশিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে শৌখিন পরিবারগুলো বাসা বাড়িতে শোভা বাড়ানোর জন্য কিনে নিয়ে যান তৈজসপত্রগুলো। সাজিয়ে রাখা হয় বিভিন্ন শোকেস ও দেয়ালে। সাধারণত দশ থেকে ছয়শ’ টাকা পর্যন্ত এ কারুকাজের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রয় করা হয়। জাদুঘরে ঘুরতে আসা শিশু ও নারীরা এগুলো কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরেন। ফলে তাদের শখ মেটাতেই কিনে দিতে হয় এ কারুকাজের জিনিসপত্রগুলো। ঢাকার বাসিন্দা শায়লা আক্তার জাদুঘরে ঘুরতে এসে দুইশ’ টাকা দিয়ে ছোট ছোট হাঁড়িসহ তিনটি নিপুণ হাতের তৈরি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, এ হস্ত শিল্পগুলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। সোনারগাঁয়ে জাদুঘরসহ বিভিন্ন মেলায় গেলে এগুলো চোখে পড়ে। তা না হলে এগুলোর দেখা পাওয়া ভার। তাই ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতেই এগুলো কিনে নিয়েছি। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া সারিকা বলেন, শখের হাঁড়ি দেখতে খুবই সুন্দর। লাল, হলুদ, সাদা, কালো, নীল, সবুজ ও খয়েরিসহ নানা রঙের ছোঁয়া রয়েছে শখের জিনিসপত্রে। সুশান্ত কুমার পাল বলেন, সোনারগাঁও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিনা পয়সায় জাদুঘরে একটি স্টল দিয়েছে। তবে আয়তন খুবই ছোট। আয়তন ছোট হওয়ায় বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির সময় অসুবিধায় পড়তে হয়। তারপরেও বিনা পয়সায় জাদুঘরে একটি স্টল দেয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। সুশান্ত কুমার পাল বলেন, আমি একজন কারুশিল্প। আমি চারবার শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হয়েছি। একবার রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছি। বারোবার দক্ষ পুরস্কারও পেয়েছি। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে আমার ছবিও রয়েছে। তিনি বলেন, দেশ থেকে আজ প্রকৃত কারুশিল্পীরা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ কারুশিল্পকে যারা টিকিয়ে রেখেছে সরকার এ সকল কারুশিল্পীদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিলে এ শিল্পীরা তাদের বাপ দাদার পেশায় টিকে থাকতে পারে। সুশান্ত কুমার পাল জাপানে হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন। তার ছোট ছেলে শ্রীলঙ্কায় হস্তশিল্প প্রদর্শনী গিয়েছিলেন। সুশান্ত কুমার পাল আমৃত্যু এ পেশায় ডুবে থাকতে চান।
×