ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙ্গে পড়ছে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ২৮ মে ২০১৯

 ভেঙ্গে পড়ছে ঢাকা

যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বর গুপ্তের কাব্যবচন ধার করে এখন আমরাও বলতে পারি ‘রাতে মশা, দিনে যানজট- এই নিয়ে ঢাকায় আছি।’ রাজধানীর সর্বত্র রাতে মশা ও দিনে যানজটের উৎপাত-উপদ্রব এক কথায় অসহনীয়, অবর্ণনীয়। সত্যি বলতে কি, ঢাকার আকাশ-বাতাস-রাস্তাঘাট জনজীবন প্রায় সবই দূষিত, পুঁতিগন্ধময়, ধূলিধূসরিত, বায়ুদূষণ-শব্দদূষণে জর্জরিত, সর্বোপরি বসবাসের অযোগ্য। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বেঁচেবর্তে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি ও নির্ভেজাল খাবার পাওয়া রাজধানীবাসীর জন্য এক আকাশকুসুম কল্পনা। বেঁচে থাকার ন্যূনতম বৈশ্বিক মানদন্ডে রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম ইরাক। তবে ইরাক একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশ। অন্যদিকে ঢাকা নিরূপদ্রব রাজধানী। সেই প্রেক্ষাপটে ঢাকার অবস্থা এতটা খারাপ ও শোচনীয় হবে কেন? এ প্রশ্ন ওঠা জরুরী ও অপরিহার্য। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের ৪র্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রায় সব বক্তা একমত পোষণ করেন যে, কোন মানদ-েই বসবাসযোগ্য নয় রাজধানী ঢাকা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকের মতে, একটি শহরের বাসযোগ্যতার মানদ- যদি ১০০ পয়েন্ট হয়, তাহলে ঢাকার প্রাপ্তি বড়জোর ৩৮। যানজট, জলাবদ্ধতা, ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য, অপ্রতুল নাগরিক সেবা, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সঙ্কট, বায়ুদূষণ-শব্দদূষণ, জনস্বাস্থ্য, খোলা পার্ক ও মাঠের অভাবসহ নানা সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত রাজধানী। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, মশার গান ও যানজট খুবই অপছন্দের। পরিকল্পিত নগর বিনির্মাণে ভিশনের অভাব, মহানগর পরিকল্পনার অনুপস্থিতি, কেন্দ্রীভূত উন্নয়ন পরিকল্পনা, জনসংখ্যাধিক্য, যোগ্য পরিকল্পনাবিদের অভাব, সর্বোপরি জবাবদিহি ও সমন্বয়হীনতা এহেন শোচনীয় দুরবস্থার জন্য দায়ী। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নগর পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য। প্রয়োজনে রাজধানী স্থানান্তরিত করতে হবে। প্রথমত পানির কথাই ধরা যাক। বোতলের পানি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলা হলেও বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খবর, ওয়াসার পানিসহ অধিকাংশই মানসম্মত ও নিরাপদ নয়। অনুমোদনহীন বোতলের পানিও সহজলভ্য। আর পানি বিশুদ্ধ হবেই বা কিভাবে ও কোত্থেকে। রাজধানীর চারপাশে পানির উৎস বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদের পানিও দূষিত। পুঁতিগন্ধময়, নোংরা আবর্জনায় পরিপূর্ণ সর্বোপরি মশা-মাছি রোগ-জীবাণুর প্রজননস্থল। সেই অনুপাতে নেই মশকনিধন কর্মী, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সহায়তাকারী। মশকনিধন করতে ঢাকার মেয়র যা কিছু আছে তাই নিয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেও কাজ কতটা হচ্ছে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বিস্তর। ঢাকার হাট-বাজারসহ খাবার হোটেল-রেস্তরাঁও আদৌ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক অভিযান চালিয়ে দেখতে পায় যে, ২শ’টি হোটেল-রেস্তরাঁর মধ্যে মাত্র ৫৭টির খাবার মানসম্মত। নামী-দামী কোম্পানির ৫২টি নিত্যপণ্য মানহীন ও জনস্বাস্থ্য হানিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে রাজধানীর শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, যানজট, জলজট, জনজট ইত্যাদি। এতসব সমস্যাসঙ্কট নিয়ে একটি শহর, তাও আবার রাজধানী বেঁচে-বর্তে থাকে কিভাবে? বিশ্বের অনেক দেশেই পরিকল্পিত রাজধানী ও নগর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়েছে। ঢাকায় আজ পর্যন্ত কেন তা হলো না, সেটি এক বিস্ময় বটে। এর পাশাপাশি সবিশেষ জোর দিতে হবে পানি ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ যথাসম্ভব প্রতিরোধসহ নিরাপদ যানবাহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর। এর জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততাও প্রত্যাশিত বৈকি।
×