ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মিথের ‘দুয়ো’ জয় করা সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৭ মে ২০১৯

 স্মিথের ‘দুয়ো’ জয় করা সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে আলোচিত বল টেম্পারিং কলঙ্কে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। মার্চে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও আমিরাতে পাকিস্তান সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ছিলেন না দুই তারকা। খেলেছেন আইপিএলে। ক’দিন আগে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তিনটা ম্যাচও ছিল আনঅফিসিয়াল। ওই সিরিজেই দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন স্মিথ। বিশ্বকাপের আগে আইসিসির অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচেও নিজের জাত চেনালেন ২৯ বছর বয়সী সুপার উইলোবাজ। ১০২ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো তার ১১৬ রানের চমৎকার সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৯ উইকেটে ২৯৭ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর গড়ে অস্ট্রেলিয়া। এরপর ৩ বল আগে হট-ফেবারিট ইংলিশদের ২৮৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১২ রানের জয় তুলে নেয় বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। গ্যালারি থেকে উগ্র ইংল্যান্ড সমর্থকদের ‘দুয়ো’ ধ্বনি উপেক্ষা করে স্মিথের এই সেঞ্চুরি প্রমাণ করে ‘হি ইজ এ্যা মাস্টার ক্লাস।’ ‘হ্যাঁ আমি মাঠে নামার সময় এসব শুনেছি, কিন্তু মোটেই গুরুত্ব দেইনি। কেবল আমার নিজের কাজটাই করেছি। আমি এটাও দেখেছি যে, সেঞ্চুরির পর ব্যালকোনিতে দাঁড়ানো দলের সতীর্থরা আমাকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কিছু করতে পারা আমার জন্য সবসময়ই গর্বের। বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করে তুলছি। ভাল লাগছে যে আয়োজক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেই আমরা জয় পেয়েছি। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বাগতিকরা ছিল শক্তিশালী। সামনে আমাদের আরও ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে বলেন স্মিথ। সত্যি মাস্টার ক্লাস না হলে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে এত ভাল ব্যাটিং অসম্ভব। পরশু সাউদাম্পটনের গ্যালারি থেকে ছুটে আসছিল একের পর এক দুয়োধ্বনি। প্রতারক, ঠগ, মাঠ থেকে বেরিয়ে যাও এমন সব শব্দ। শব্দের উৎস ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মি। স্লেজিংয়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠার মতো সামর্থ্য কারও নেই! তাদের এইসব দুয়ো ধ্বনি চলছিল মাঠে থাকা স্মিথ ও ওয়ার্নারকে উদ্দেশ করে। কিন্তু এসব কোন কিছুই তাদের মনোযোগ সরাতে পারেনি। কেপটাউনে বল টেম্পারিংয়ের পর কেটে গেছে এক বছরের বেশি। স্মিথ ও ওয়ার্নার তাদের শাস্তি শেষ করে দলে ফিরলেও সেই ঘটনার রেশ কাটেনি এখনও যার প্রমাণ এদিন মাঠেই দিয়েছে বর্মি আর্মি। কিন্তু এসব পাশ কাটিয়ে স্মিথ ঠিকই প্রমাণ করেন, এখনও ফুরিয়ে যাননি। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। টস হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া করে ২৯৭। যা করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ২৮৫ রানেই অলআউট হয়ে ফেরে সবাই। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন জেমস ভিন্স। এছাড়া ইয়ন মরগানের ইনজুরিতে দলকে নেতৃত্ব দেয়া জস বাটলার ৫২, জেসন রয় ৩২, ক্রিস ওকস ৪০ রান করেন। এর আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার ওয়ার্নারকেও শুনতে হয় গ্যালারির কটু কথা, তবে তাতে খুব একটা বিচলিত না হয়ে ৫৫ বলে ৪৩ রান করে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ওয়ান ডাউনে মাঠে নেমে স্মিথকেও শুনতে হয় ‘প্রতারক চলে যাও।’ কিন্তু এরপরও সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন দুরন্ত এই উইলোবাজ। স্মিথ ১০২ বল খেলে ১১৬ রান করেন যেখানে ছিল তিনটি ছক্কা ও ৮টি চারের মার। সেঞ্চুরি করে ফেরার মুখে স্মিথ অবশ্য দর্শকদের করতালি পেয়েছেন। স্মিথের সেঞ্চুরি ছাড়াও শন মার্শ ৩০, উসমান খাজা ৩১, এ্যালেক্স কেরি ৩০ রান করেন। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চের কণ্ঠেও ছিল স্মিথের প্রশংসা। তিনি বলেন, ফিল্ডিং ভাল না হলেও ব্যাটিং নিয়ে খুশি। স্টিভ (স্মিথ) দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ নিজেদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে এ্যারন ফিঞ্চের দল। ১ জুন ব্রিস্টলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। বল টেম্পারিং কলঙ্কের পর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা স্মিথ-ওয়ার্নারের ওপর থাকবে বিশেষ দৃষ্টি। যেখানে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেই মূল মঞ্চে জ্বলে ওঠার আগাম বার্তা দিলেন তুখোড় দুই তারকা।
×