ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাহী-রুবেল, সাব্বিরের সামনে আরও পরীক্ষা

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৬ মে ২০১৯

 রাহী-রুবেল, সাব্বিরের সামনে আরও পরীক্ষা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ দল এই মুহূর্তে সবচেয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে। বিশ্বকাপ খেলতে আসা বাকি দলগুলোর মধ্যে আয়োজক ইংল্যান্ড ও মাশরাফি বিন মর্তুজার দল ছাড়া সম্ভবত এখন আর কোন দলই এত চাঙ্গা নেই। কারণ স্বাগতিক ইংল্যান্ড সবেমাত্র ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে। আর বাংলাদেশ দল নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে। আর এ কারণেই এখন বাংলাদেশ দলের হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ করে নেয়া কঠিনসাধ্য হয়ে পড়েছে স্কোয়াডে থাকা ১৫ জনের। একাদশে খেলার সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকলেও কম্বিনেশনের কারণে এবং ধারাবাহিক পারফর্মেন্সের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুযোগ পাবেন না অনেক ভাল পারফর্মারও। যেমন অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন ও উদীয়মান তরুণ আবু জায়েদ রাহী, মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমান ও লিটন কুমার দাস একাদশে জায়গা নিশ্চিত করতে পারেননি। মূল লড়াইয়ে নামার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাই একাদশে ঠাঁই করে নেয়ার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন এই ক্রিকেটাররা। আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্ডিফে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ। ত্রিদেশীয় সিরিজ ছিল বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের জন্য বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় নামার আগে দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ফিটনেস নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা। তবে বিশ্বকাপের ১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে যারাই সুযোগ পেয়েছিলেন কাজে লাগিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে একাদশে যারা সুযোগ পাবেন সেই খসড়া মোটামুটি চূড়ান্তই হয়ে গেছে- তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, তিনে সাকিব আল হাসান, চারে মোহাম্মদ মিঠুন, পাঁচে মুশফিকুর রহীম, ছয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাতে সাব্বির রহমান/মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ, দশে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও এগারোয় মুস্তাফিজুর রহমান। সাত নম্বরে সাব্বির অনেক আগে থেকেই একদম নিশ্চিত হয়ে ছিলেন। আর সে কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তাকে নেয়া হয়েছে। কারণ অধিনায়ক, নির্বাচকরা দাবি করেছিলেন ওই পজিশনে ব্যাটিং করলে মারকুটে সাব্বির দলকে ভাল একটি সংগ্রহ এনে দিতে পারবেন। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিব ইনজুরির কারণে খেলতে না পারায় ভজঘট বেঁধে গেছে। তার বদলে মোসাদ্দেক সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন। দেশের পক্ষে দ্রুততম ওয়ানডে অর্ধশতকের রেকর্ড গড়ে ২৪ বলে ৫২ রানের যে বিস্ফোরক ইনিংস উপহার দিয়েছেন তাতে প্রথম কোন শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু কোচ স্টিভ রোডস এরপরও বলে রেখেছেন, মোসাদ্দেক একাদশে নিশ্চিত নয়। কারণ কম্বিনেশনের কারলে তার হয়তো খেলার সুযোগ হবে না। আমাদের এখন অনেক ভাল খেলোয়াড় আছে। তবে মোসাদ্দেকের এই ইনিংসটির কারণে এখন তাকে আরেকটু নিচের দিকে সাব্বিরের পজিশনে একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছে। আর দুই ম্যাচ ব্যাট হাতে নেমে এক ম্যাচে শূন্য রানেই ফিরে গেছেন সাব্বির। অথচ তিন নম্বরে সুযোগ পেয়েছিলেন নামার সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। সাব্বির তাই এখন একাদশে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারছে না। সৌম্যকে নিয়ে ছিল নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা। এমনকি অনেকে তার বিশ্বকাপ দলে থাকার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিনটি দুর্দান্ত অর্ধশতক হাঁকিয়ে নিজেকে এই কন্ডিশনে প্রমাণ করেছেন তিনি। তাই তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে ডানহাতি লিটনকে উপযুক্ত বলে অনেকে দাবি করলেও সৌম্য তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। যদিও ত্রিদেশীয় সিরিজে এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই লিটন ৬৭ বলে ৭৬ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেছেন। পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও ছন্দে ফিরেছেন কিছুটা। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে মুস্তাফিজ ছাড়াও একাদশে নিশ্চিত তরুণ পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। কারণ তার বিষয়ে মাশরাফিই বলেছেন, পরবর্তী ১০/১২ বছরের জন্য আমাদের অন্যতম সম্পদ সাইফ।’ সেক্ষেত্রে নবাগত রাহী ও অভিজ্ঞ হয়েও ফিটনেস সমস্যার কারণে রুবেল একাদশে জায়গা করে নিতে সমস্যায় পড়বেন। অথচ এইসব ক্রিকেটারই দারুণ কার্যকর হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। অবশ্য একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে কন্ডিশন অনুসারে স্পিনার কম নিতে চাইলে সেক্ষেত্রে মিরাজকে বাইরে রেখে আরেকজন পেসার খেলানো হলে রাহী-রুবেলের ভাগ্য খুলবে। তরুণ রাহী এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার সম্পর্কে অধিনায়ক মাশরাফিও বলেছেন, সে যেমনটা চায় তেমন সুইং করাতে পারে এবং সেটা বলে-কয়ে। দেশের আর কোন বোলার এটা পারে না। রাহী যদি বলে বলটাকে সে ইনসুইং করাবে কিংবা আউটসুইং করাবে তাহলে সেটাই করবে সে। আর রাহী নিজের সম্পর্কে বলেছেন, আমি যদি অনেক রানও দেই, ব্যাটসম্যানরা যদি আমাকে অনেক পেটাই। তবু আমি সুইং করানো বাদ দেব না। আর এবার বিশ্বকাপে সে জন্যই রাহী সুযোগ করে নিয়েছেন। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে অভিষেকও হয়েছে। অবশ্য সেখানে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠেছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে নেয়ার উপযুক্ততা প্রমাণ করেছিলেন। আর অভিজ্ঞ রুবেলের সামর্থ্য ও যোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। অতীতে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি দুর্দান্ত বোলিংয়ে। কিন্তু এখন ফিটনেস সমস্যা, কম ম্যাচ প্র্যাকটিস ইত্যাদির কারণে একাদশে জায়গা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার বিষয়ে মাশরাফি বলেন, একমাত্র বোলার আমাদের যে ধারাবাহিকভাবে একই গতিতে বোলিং করতে পারে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দলকে ব্রেক থ্রু দেয়ার ক্ষেত্রে রুবেল সেরা। ডেথ ওভারগুলোয় তার ওপর ভরসা করা যায়। সেই রুবেল ছোটখাটো ইনজুরির কারণে গত এক বছর ধরে প্রায় অনিয়মিতই হয়ে পড়েছেন একাদশে। তবে তিনি যে দলের জন্য অপরিহার্য সেটা বোঝা গেছে যখনই কিছুটা ফিট হয়েছেন তাকে দলে টেনে নেয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও ঠিকমতো খেলতে পারেননি ফিটনেস সমস্যা থাকার কারণে। এখন এই দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে এ কয়েকজন ক্রিকেটারের জন্য অপেক্ষা করছে বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় ভালভাবে সফল হতে পারলে বিশ্বকাপের ম্যাচে একাদশে ঠাঁই হবে। নতুবা যেমনটা টিম ম্যানেজমেন্ট ভেবে রেখেছে কিংবা দিব্যচোখে যা দেখা যাচ্ছে তেমনটাই হবে একাদশ, হবে না কোন হেরফের।
×