ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর ত্রয়োদশ স্প্যান বসেছে

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৬ মে ২০১৯

 পদ্মা সেতুর  ত্রয়োদশ  স্প্যান  বসেছে

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর ত্রয়োদশ স্প্যান বসে গেছে। সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৩বি’ নম্বর স্প্যানটি শনিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বসানো হয়েছে। তাই এখন সেতু দৃশ্যমান হলো ১৯৫০ মিটার। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীরা খুব সহজেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বসিয়ে দেন। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা হয়। ১১টা ২০ মিনিটে জাহাজটি স্প্যানটি নিয়ে ১৪ ও ১৫নং খুঁটির সামনে অবস্থান নেয়। তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ নামের ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি যথা স্থানে নোঙ্গর করানো হয়। এরপর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার সকালে ক্রেনপাজা করে ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়। এ মাসে এই নিয়ে দুটি স্প্যান বসল। এর আগে ৬ মে সেতুর ১২তম ‘৫-এফ’ নম্বর স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি ২০ ও ২১ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয়। এ মাসে অল্পদিনের ব্যবধানে ২টি স্প্যান বসানো হলো। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ‘৩বি’ নামের এই স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসানোর কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। তাই সকাল ৮টায় মাওয়ার বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ থেকে স্প্যান নিয়ে ভাসমান ক্রেনের রওনা দেয়ার কথা থাকলেও তাতে বিলম্ব হয়। ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এটি কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা দেয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভাসমান ক্রেন স্প্যান নিয়ে ১৫ নম্বর খুঁটির কাছে পৌঁছে। এরপর এটি স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ্যাঙ্করিংয়ের পর দুপুর ২টায় জানানো হয় স্প্যানটি শনিবার বসনো হবে। কারণ সম্পর্কে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, স্প্যান নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছাতে বেশি সময় লেগে যায়। এ্যাঙ্করিং করার পর দেখা গেছে বাকি যে বেলা রয়েছে তাতে স্প্যান বসানোর পর পুরো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই শনিবার সকালে এটি খুঁটির ওপর স্থাপন করা হবে। তখন স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে নোঙ্গর করে রাখা হয়। পরে শনিবার এটি খুঁটির ওপর তোলা হয়। পদ্মা সেতুতে রোডওয়ে স্লাব ও রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে সেতুতে মোট ৩১২টি রেলওয়ে স্লাব ও ১৬টি রোডওয়ে স্লাব বসানো সম্পন্ন হয়েছে। আর বসানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে ২০০০টি রেলওয়ে স্লাব ও ৮০০টি রোডওয়ে স্লাব। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯শ’ ৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব আর ২ হাজার ৯শ’ ৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ২৩টি স্প্যানের মধ্যে ১৩টি স্প্যান বসানো হলো। জানা যায় পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ আর নদী শাসন কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৬৭ শতাংশ। সেতুর মূল ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২৩৬টি পাইল ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। বাকি থাকা ২৬টি পাইল জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী। এছাড়া মূল সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৫টি খুঁটির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে আরও ছয়টি খুঁটির কাজ শেষ হবে। আর বাকি ১১টি খুঁটির কাজ চলমান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। দু’পাড়ে সংযোগসড়কসহ সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ বহুমুখী এই সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
×