ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৮ বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৬ মে ২০১৯

 ৮ বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ ঘোষণার আট বছর পেরিয়ে গেলেও চিলাহাটি স্থলবন্দর পুনরায় প্রতিষ্ঠার কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। চিলাহাটি স্থলবন্দর পুনরায় চালুর বিষয়টি বর্তমানে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমেই থমকে আছে। অপরদিকে চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদীবাড়ি পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ কানেক্টিভিটি উপ-আঞ্চলিক রেল সংযোগ স্থাপিত প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য বরাদ্দ হলেও সেটির কাজ শুরু হয়নি বাংলাদেশ অংশে। অথচ ভারতের অংশের চিলাহাটি সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। নীলফামারী জেলা সদর হতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নে চিলাহাটির অবস্থান। চিলাহাটি ব্রিটিশ আমলে প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বর্তমানে চিলাহাটি থেকে ঢাকা-খুলনা ও রাজশাহী পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। এখান থেকে সড়কপথ রয়েছে। চিলাহাটিতে রয়েছে ব্যাংক, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও বিজিবি ক্যাম্প। এ ছাড়া এ জেলায় রয়েছে উত্তরা ইপিজেড, দারোয়ানী সুতাকল, ছয়টি পাটকল, তিনটি সিরামিক কারখানা ও বেশ কিছু পোশাক কারখানা। পাশের জেলাগুলোয়ও গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিলাহাটি স্থলবন্দর ও চিলাহাটি থেকে ভারতের মধ্যে রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হলে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা বাড়বে। এসব দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। এ বন্দরে সড়ক ও রেলপথের সুবিধা থাকায় আমদানি-রফতানির মালামাল পরিবহনে খরচ কমবে। এ জেলায় অবস্থিত উত্তরা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাসহ (ইপিজেড) দেশের অন্য ইপিজেডের বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন ব্যবসায়ীরা। এসব কর্মকা-ের ইতিবাচক প্রভাবে দ্রুত পাল্টে যাবে নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের চিত্র। জানা যায়, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় স্থলবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। চালু থাকে শুধু আন্তর্জাতিক চেকপোস্টটি। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ২০০২ সালের জুন মাসে অজ্ঞাত কারণে চিলাহাটি হলদীবাড়ি চেকপোস্টটিও বন্ধ করে দেয়। চিলাহাটি স্থলবন্দর ও চেকপোস্ট চালু করার দাবিতে ২০০৯ সালে ডিসেম্বর মাসে গোটা জেলায় ১৫ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচী পালন করা হয়। যে কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। থমকে গিয়েছিল গোটা জেলা। চিলাহাটি স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবু মুসা মাহমুদুল হক বলেন, ২০১১ সালের ১৯ জুন তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চিলাহাটি পরিদর্শনে এসে জনসভায় শুল্ক স্টেশন চালুসহ চিলাহাটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চিলাহাটি স্থলবন্দরের বিষয়টি তোলা হয়। সে ক্ষেত্রে লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার চেয়ে চিলাহাটি স্থলন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট চালুর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল মন্ত্রিসভায়। একই বছরের ১ আগস্ট সরকারী গেজেটে চিলাহাটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও আজও চালু হয়নি চিলাহাটি স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্টটি। নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ঘোষিত স্থলবন্দরটি বাস্তবায়নের অভাবে দর্শনা, সোনামসজিদ, বেনাপোল, হিলি ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে অধিক খরচে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি করছেন উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নীলফামারী জেলায় শিল্প ও আইটি পার্কসহ বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে উঠছে। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এরপরও অজ্ঞাত কারণে স্থলবন্দর বাস্তবায়ন আটকে আছে। নীলফামারী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মারুফ জামান বলেন, স্থলবন্দরটি চালু হলে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ও এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সে সময় নৌ-সচিব অশোক মাধব রায় গেজেট প্রকাশের কথা জানিয়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষমাণ থাকার কথা উল্লেখ করেন। অপরদিকে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনে বাংলাদেশ অংশের চিলাহাটি হয়ে ভারতের সীমানা পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন ও চিলাহাটি রেলস্টেশনকে আন্তর্জাতিকে উন্নীতকরণে গত বছর পরিকল্পনা কমিশনে পাস হলেও আজও কাজ শুরু হয়নি।
×