ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুয়াওয়ে দ্বন্দ্বে কে লাভবান?

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৬ মে ২০১৯

 হুয়াওয়ে দ্বন্দ্বে কে লাভবান?

শেষ পর্যন্ত হুয়াওয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব কিছুটা শিথিল হয়েছে। আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত হুয়াওয়েকে মার্কিন যন্ত্রপাতি কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ এই তথ্য জানায়। এর আগে স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আদেশ মোতাবেক গুগল তাদের সেবা প্রদান বন্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকিকেই কারণ দেখানো হয়। তাদের অভিযোগ চীনকে গুপ্তচরবৃত্তিতে সাহায্য করছে এই কোম্পানিটি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও একই অভিযোগ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে যেমন ‘এনটিটি লিস্ট’ বা কালো তালিকাভুক্ত করেছে ঠিক একইভাবে যদি পশ্চিমা কোন দেশ হুয়াওয়েকে আবার চাপে ফেলতে চায় তাহলে সেই দেশটি হবে ব্রিটেন। যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ মাইক্রোচিপ ডিজাইন প্রতিষ্ঠান এআরএম হুয়াওয়ের সঙ্গে সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন শীর্ষ চীনা কূটনৈতিক জানিয়েছেন যে ব্রিটেনের ৫ জি নেটওয়ার্ক থেকে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করা হলে তারাও বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তিনি বিবিসিকে জানান বেইজিং ইতোমধ্যেই ‘কিছু সচেতন পদক্ষেপ দেখেছিল।’ যুক্তরাজ্য এখনও তাদের ফাইভ জি নীতি পর্যালোচনা করছে। তারা হুয়াওয়েকে এমন সব যন্ত্রপাতি সরবারহ করার অনুমতি দিতে পারে যেগুলো দিয়ে নজরদারি করা সম্ভব নয়, যেমন- এন্টেনা মাস্ট। একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে প্যানাসনিকও। তারাও বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে হুয়াওয়ের সঙ্গে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকেও হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বার বার নিরাপত্তার কথা বললেও মূলত এই সমস্যার শুরু বাণিজ্যযুদ্ধ থেকেই। নিরাপত্তা ঘাটতি যে একেবারেই নেই এমন সম্ভাবনা যদিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। চীনের ব্যাপকমাত্রায় গুপ্তচরবৃত্তি এবং প্রযুক্তি নকল করার অভ্যাস সবারই জানা। যুক্তরাষ্ট্র ঠিক যে অজুহাতে হুয়াওয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে ঠিক একই কাজটাই তারা নিজেরা বহু বছর ধরে করে আসছে। স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্য থেকে মার্কিনীদের অচিন্তনীয় মাত্রার নজরদারির কথা বিশ্ববাসী জানতে পারে। এই দ্বন্দ্বে কে লাভবান হবে সেটা এখনই বোঝা খুব মুশকিল। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধাক্কা খেলেও হুয়াওয়ের ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা বেশ ভালই। আফ্রিকা বা এশিয়ার যে সব রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল তাদের জন্য কম খরচে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বারবারই চীনের দারস্থ হতে হয়েছে। সস্তা চাইনিজ পণ্যে সয়লাব হয়েছে প্রযুক্তি বাজার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরই এ্যাপলের বেশ বড় একটা বাজার চীন। চীন যদি তাদের বাজার থেকে এ্যাপলের পণ্য প্রত্যাহার করে নিতে বলে তবে এ্যাপল তাদের বড় একটা বাজার হারাবে। যদিও এখন পর্যন্ত চীন সে রকম কোন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন স্মার্টফোন এবং গাড়ি তৈরিতে ব্যবহার হওয়া কিছু দুর্লভ খনিজ উপকরণ সরবারহে চীন বাধা দিতে পারে। এসব খনিজ উৎপাদনে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য বিদ্যমান। টেক যুদ্ধ চরমে পৌঁছালে চীন এমনটা করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি একে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে আখ্যা দেন। চীন বেশ কিছু দুর্লভ খনিজ সরবারহের ৯৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই খনিজগুলো শতকরা ৮০ ভাগ চীন থেকে আমদানি করে। থ্রি কন্সাল্টিংয়ের প্রেসিডেন্ট জেমস কেনেডি এই বিষয়ে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘চীন এই মুহূর্তে প্রায় প্রত্যেকটা অটোমোবাইল, বিমান, স্মার্টফোন কারখানা বন্ধ করে দিতে পারে।’ টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে এবং আমেরিকা সরকারের মধ্যে এই টেক যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবে সেটা এখনই বলা জটিল। তবে নিঃসন্দেহে সামনের দিনগুলোতে মার্কিন যে কোন পণ্য বা সেবা ব্যবহার করতে বড় বড় কোম্পানিগুলো অনুৎসাহী হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হুয়াওয়ে রেশে যদি আগামী ২/৩ বছরে চাইনিজ কোন প্রযুক্তি জায়ান্ট আকর্ষণীয় কোন অপারেটিং সিস্টেম এবং প্লেস্টোরের মতো প্লাটফর্ম দাঁড় করাতে পারে তাহলে সিলিকন ভ্যালির রাজত্ব সরু হয়ে আসবে। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের খ্যাপাতে সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য?
×