ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমিকার মামলায় আটক ম্যারাডোনা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৫ মে ২০১৯

 প্রেমিকার মামলায়  আটক ম্যারাডোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খেলার মাঠে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও বিতর্কিত কর্মকান্ডেও কম ছিলেন না দিয়াগো ম্যারাডোনা। মাঠ ছাড়ার পর এখনও বিতর্ক সমানে ধরে রেখেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। শরীরটা খারাপ যাওয়ায় কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে পারেননি তিনি। মেক্সিকো থেকে অস্ত্রোপচারের উদ্দেশে ফিরছিলেন নিজ দেশ আর্জেন্টিনায়। কিন্তু সেখানেই আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বিমানবন্দর থেকে ম্যারাডোনাকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। সাবেক প্রেমিকা রোকিও অলিভিয়ার করা ৯ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলায় ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে আটক করা হয়েছে শুক্রবার ভোরে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ছয় বছর প্রেম করার পর গত ডিসেম্বরে রোকিওর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন ম্যারাডোনা। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্যান মিগেল পারিবারিক আদালতে ৯ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন রোকিও। মামলায় ১৩ জুন ম্যারাডোনাকে হাজির থাকার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সশরীরে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমেও হাজিরা দিতে পারবেন তিনি। মেক্সিকোর দ্বিতীয় সারির ক্লাব ডেরাডোস দে সিনালোয়ার কোচিংয়ের দায়িত্বে আছেন ম্যারাডোনা। সম্প্রতি কাঁধের চোট বেড়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচারের জন্য দেশে ফিরেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। বিতর্ক আর ম্যারাডোনা সমসময়ই পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করে চলা এক জুটি! খেলোয়াড়ি জীবনে মাঠে এবং মাঠের বাইরের বহু ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন এই ফুটবল জাদুকর। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন খেলোয়াড়ি জীবনটা শেষ হয়ও বিতর্কিত কান্ডে। এরপর বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন আলোচিত-সমালোচিত ঘটনার জন্ম দিয়ে নিয়মিত আলোচনায় এসেছেন আর্জেন্টাইন সাবেক এই ফুটবল তারকা। তবে আটক হলেও কারাগারে নেয়া হয়নি ম্যারাডোনাকে। মামলা সংক্রান্ত একটি নোটিস দেয়া হয়েছে তাকে। নোটিসে আগামী ১৩ জুন ওই মামলায় আদালতে বাধ্যতামূলক হাজিরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে। তবে নিজে হাজিরা না দিলেও চলবে। জানা গেছে, ২০১২ সালে অলিভিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় ম্যারাডোনার। সোনালি চুলের এই নারী নিজেও ফুটবল খেলতেন একসময়। তাই দুজনের বয়সের পার্থক্য প্রায় ৩০ বছর হলেও সম্পর্কটা জমে যায়। দ্রুতই একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। বান্ধবীকে বুয়েন্স আয়ার্সে একটি বাড়িও কিনে দেন ম্যারাডোনা। তবে মেক্সিকোর দ্বিতীয় বিভাগের একটি দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অধিকাংশ সময় সেখানেই থাকতে হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে। সম্পর্কের অবনতি নাকি অলিভিয়ার দেয়া এক সাক্ষাতকার। এই সাবেক খেলোয়াড় সাক্ষাতকারে একপর্যায়ে নিজেকে ‘সিঙ্গেল’ দাবি করেছিলেন। পেকোরার নামে এক সাংবাদিকের দাবি, এতে নাকি ক্ষুব্ধ হন ম্যারাডোনা। ঝগড়া-ঝাঁটির এক পর্যায়ে ম্যারাডোনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের আরেক সঞ্চালক জানিয়েছিলেন, অলিভিয়ার কোনভাবেই মেক্সিকো যেতে রাজি হয়নি। সে আর্জেন্টিনাতেই থাকতে চায়। তবে যাই হোক না কেন কারও কাছে ম্যারাডোনা সাক্ষাত নরকের দূত, কারও কাছে ঈশ্বর। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, ম্যারাডোনা ছাড়া অপূর্ণই থেকে যাবে ফুটবল। বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে অনেক অনাহুত ঘটনার জন্ম দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। ১৯৯৭ সালে ৩৭তম জন্মদিনে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর এক যুগ অনেকটাই নিভৃতে ছিলেন। কিন্তু ২০১০ সালে আর্জেন্টিনার কোচ হয়ে আবারও নিজেকে পাদপ্রদ্বীপের আলোয় তুলে আনেন। এরপর বিশ্বকাপে ব্যর্থতা এবং বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে কোচ পদে থাকা নিয়ে টানাপোড়েনে আর্জেন্টাইন বোর্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে মেসি, হিগুয়াইনদের অভিভাবক হিসেবে পাশে থাকা হয়নি। নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের কারণে বেশ কয়েকবার ম্যারাডোনার জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়েছিল। এ কারণে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকাকে নিষিদ্ধও হতে হয়। নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল ম্যারাডোনার জীবন নিয়ে। দু’বার তো মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসেন। ২০০০ ও ২০০৪ সালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবল তারকা। কিন্তু সে যাত্রায় দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনার শুশ্রুষায় নবজীবন পান। তারপর থেকে আর নিষিদ্ধ জগতে পা রাখেননি। একপ্রকার ভালই চলছিল জীবনের গতিপথ। তবে হঠাৎ করে ২০১২ সালে কিডনিতে অস্ত্রোপচার করার কারণে আরেকবার ধাক্কা খেতে হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরকে। এখন আবার নতুন করে ঝামেলায় জড়ালেন ম্যারাডোনা।
×