ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আফগানদের হয়ে রশীদ খানের হুঙ্কার

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৫ মে ২০১৯

 আফগানদের হয়ে রশীদ খানের হুঙ্কার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রশীদ খান। ক্রিকেটে ছোট দেশের বড় তারকা। শুধু আফগানিস্তানই নয়, ধুরন্ধর বোলিংয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেরেই এক ভয়ঙ্কর নাম। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এমনকি জিম্বাবুইয়ের মতো দেশকে পেছনে ফেলে আফগানরা যে এবার বিশ্বকাপে খেলছে, তার নেপথ্যের অন্যতম রূপকার ২০ বছর বয়সী এই লেগস্পিনার। বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ লীগ দাপিয়ে বেড়ানো রশীদ যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার বড় প্রমাণ টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে বোলারদের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসা। শুধু তাই নয়, ক’দিন আগেও ওয়ানডেতে অলরাউন্ডারদের তালিকায় ছিলেন এক নম্বরে। এখন দ্বিতীয় স্থানে। ইংল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে আফগানদের তুরুপের তাস সেনসেশনাল এ স্পিনার বলেছেন, তারা যে আর কাগুজে বাঘ নয়, বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার এটাই সময়। হিসেবে রাখতে বললেন তার দেশ আফগানিস্তানকেও। রশীদ বলেন, ‘আমরা যে শুধুই কাগজে-কলমে ভাল দল নই তা বিশ্বকে দেখানো দরকার।’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চার বছর আগেই অভিষেক রশীদের। দুই বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ইতিহাসে চতুর্থসেরা বোলিংয়ের (৭/১৮) নজির গড়ে সাড়া ফেলে দেন। আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ অভিষেক ২০১৫-এ। চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল তারা। এবার তাদের লক্ষ্য নিশ্চয়ই আরও বড়। গত টুর্নামেন্টে শুধু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল আফগানিস্তান। এবার আরও ভাল করার বিষয়ে আশাবাদী তারা, আফগান এ তারকার লক্ষ্য বড় দলগুলোকে হারানো, ‘এর আগে আমরা চাপের মুহূর্তে ভাল করতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বকাপ মানেই বড় দলগুলোকে হারানোর সুযোগ। তাই ভাল খেলতে হবে। আমরা অতীতে এশিয়া কাপে ভাল খেলেছি। এখন বিশ্বমঞ্চে আমাদের ভাল কিছু করার সময়।’ আমিরাতে গত এশিয়া কাপে পঞ্চাশ ওভারে ফরমেটে শক্তিশালী টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করেছিল আফগানিস্তান। রশীদ খান বলেন, ‘এশিয়া কাপে আমরা পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রমাণ করেছি যেকোন দলকে হারাতে পারি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘একমাত্র বিষয় হচ্ছে তোমার দক্ষতায় বিশ্বাস রাখা। বড় ম্যাচে শুধুমাত্র নিরুদ্বেগ থাকো এবং তোমার খেলাটা উপভোগ করো এবং বিশ্বকাপে আমাদের এমন থাকাটাই উচিত হবে।’ মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০১৫ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক রশীদ খানে। ওয়ানডেতে দ্রুততম ৪৪ ম্যাচে এক শ’ উইকেট শিকারের রেকর্ড স্পর্শ করে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তোলেন। বয়সটা কম হলেও মানসিকতায় বেশ পরিণত রশীদ, ‘আমি নিজের উপর কোন চাপ নেই না, খেলাটা উপভোগ করার চেষ্টা করি। উইকেট পাই না পাই নিজের বোলিংটা উপভোগ করি। আমার নজর থাকে কাজটি সঠিকভাবে করা এবং ভাল বোলিং করা। আমি ফলের প্রতি নজর দেই না, নজর দেই নিজের কঠোর পরিশ্রমের প্রতি।’ চার বছরের ক্যারিয়ারে ৫৯ ওয়ানডেতে রশীদের মোট উইকেট ১২৫। সেরা ৭/১৮। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন চারবার, ৪ উইকেটেও চারবার। গত পরশু বিশ্বকাপ উপলক্ষে দশ দলের সব অধিনায়ক একত্রে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। রশীদ খানকে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেন, ‘আমি ওকে তিন বছর ধরে আইপিএলে বল করতে দেখছি। এবারই প্রথম আমি ওকে খেলেনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক কারণ রশীদও বলেছে, ও আমার বিপক্ষে বল করার অপেক্ষায় ছিল। আমি ওর বিপক্ষে ব্যাট করতে মুখিয়ে ছিলাম। তিন বছরে এই প্রথম আমি বাইরে বসে ওর কোন বল কেমন হবে সেটা বলার চেষ্টা করেছি। ১০ বারের মধ্যে নয়বার সঠিক বলতে পেরেছি। তিন বছরে এই প্রথম! সে এতটাই ভাল।’ রশীদ কেন ব্যতিক্রম? কোহলির ব্যাখ্যা, ‘সে অসাধারণ। তার স্কিল সেট দারুণ। ওর বলের গতিটাই ওকে আলাদা করে দেয়। ওর ভ্যারিয়েশনও খুবই সুক্ষ্ম। সে কোন সময়ই দেয় না বল বোঝার। ফ্লাইটের বলও ব্যাটে এত দ্রুত আসে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্যাডের ফাঁক দিয়ে যায়, এলবিডব্লিউ বা বোল্ড হয়ে যায় ব্যাটসম্যান।’
×