ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ অভিযানে শতাধিক গ্রেফতার

অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জেল থেকে বের হয়ে ফের তৎপর

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৫ মে ২০১৯

  অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জেল থেকে বের হয়ে ফের তৎপর

শংকর কুমার দে ॥ ঈদ সামনে রেখে রমজান মাসে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত এক সপ্তাহে গ্রেফতার হয়েছে অজ্ঞান পার্টির শতাধিক সদস্য। কিন্তু পুলিশের মামলা দুর্বল হওয়ার কারণে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে তারা। কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও তৎপর হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। এ কারণে অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে কঠোর হস্তে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত বড়ি নকটি, নিটরাজিপাম, লেক্সোটানিল, ইপিত্রা, সেডিল, রিভোট্রিল, ডিজোপেন, ক্লোনাজিপান, নিক্স (ঘরী), রাবিং বামের নীল রঙের কৌটা, ওষুধ মিশ্রিত জুস, খেজুর, সাতটি চোরাই মোবাইল ফোন ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, সায়েদাবাদ, রমনা, নিউমার্কেট, ফকিরাপুল, কুড়িল বিশ্বরোড, বাসস্ট্যান্ড, ওয়ারী, জয়কালী মন্দির, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অজ্ঞান পার্টির বলেছে, ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আগত ব্যক্তিদের টার্গেট করে সখ্যতা স্থাপন করে। এরপর তাদের অপর সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও তাদের সদস্যকে ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্যের আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেটকৃত ব্যক্তি রাজী হলে ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য তাকে খাওয়ায় এবং নিজেদের সদস্যরা সাধারণ খাবার গ্রহণ করে। খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের পর টার্গেটকৃত ব্যক্তি অচেতন হলে তারা তার মূল্যবান দ্রব্যাদি নিয়ে দ্রুত চলে যায়। এক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, পান, ক্রিম জাতীয় বিস্কিট ইত্যাদি ব্যবহার করে। এছাড়াও তারা অভিনব কৌশল হিসেবে সাধারণ মানুষকে অজ্ঞান করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফোন করে বলে সে আমাদের নিকট আটক আছে। তাকে মুক্ত করতে বিকাশ বা অন্যকোন মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে,। আত্মীয়-স্বজন ভিকটিমকে মুক্ত করতে টাকা পাঠালে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা টাকা নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যায়। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞানপার্টি একা একা যাতায়াতকারী যাত্রীকে টার্গেট করে থাকে। যাত্রীর বেশভুষা দেখে যাত্রীর কাছে মূল্যবান সামগ্রী থাকতে পারে, এমন আন্দাজ করে নেয়। এরপর তাকে কৌশলে খাবার, বিড়ি-সিগারেট বা কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেয়। যাত্রী অচেতন হয়ে পড়লে যাত্রীর সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে দ্রুত নেমে যায়। গ্রেফতারকৃতরা মহাখালী থেকে টঙ্গী-গাজীপুর- ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যাতায়াতকারী, গাবতলী থেকে সাভার-আশুলিয়া-চান্দুরা-মানিকগঞ্জ যাতায়াতকারী ও সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া-চিটাগাং রোড-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যাতায়াতকারীদের টার্গেট করত। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেরিওয়ালা, অচেনা সহযাত্রী বা হঠাৎ করে বন্ধু বেশে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির সদস্যরা আবির্ভূত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের উন্মুক্ত খাবার, ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, নানা ধরনের পানীয়। এসব পানীয়তে মানুষ অজ্ঞান করার বিভিন্ন দ্রব্য মেশানো হয়। এর মধ্যে এটিভ্যান নামক ট্যাবলেটটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অজ্ঞান করার ওষুধ মিশ্রিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেবনকারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা দামী মালামাল টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।
×