ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সভাপতি ছাড়া সব পদ নিয়ে জল্পনা

আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৫ মে ২০১৯

  আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত

ওয়াজেদ হীরা ॥ কয়েক মাস পরই উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল। বরাবরের মতো এবারও কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। বেড়ে গেছে তাদের কর্মতৎপরতা। তরুণদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া সম্পর্কিত দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত নীতিমালা সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহিত দলের তরুণ নেতাকর্মীরা। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে ঠিক রেখে কে আসতে পারেন বাকি নেতৃত্বে, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। সভাপতিমন্ডলীতে কে আসছেন নতুন মুখ, সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের আবার আসবেন কিনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক মন্ডলীতে এবার কারা থাকতে পারেন এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। দলীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। যারা আগে মাসে একবারও কার্যালয়মুখী হতেন না এখন তারাও নিয়মিত। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে দেশজুড়ে পুরোদমে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। সারাবছর নানা কর্মসূচীর মধ্যে থাকলেও কাউন্সিল সামনে রেখে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের নানাভাবে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। রোজার মাসে ইফতার পার্টিগুলোতে অংশগ্রহণ করে দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন। সহযোগী সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানেও নেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। দলের সাংগঠনিক কর্মসূচী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেদের রাজনৈতিক সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজ নিজ বিভাগে সাংগঠনিক কর্মকান্ড গুছিয়ে আনছেন। দলীয় সভাপতি ধানমন্ডির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয় নিয়মিত সময় দিচ্ছেন। মধ্যরাতেও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো নেতাকর্মীদের পদচারণা আর আড্ডায় সড়গরম দেখা যায়। অধিকাংশের যাতায়াত বেড়েছে গণভবন ও তৃণমূলে। সম্মেলন ঘিরে বিভিন্ন নেতাদের এক অদৃশ্য তৎপরতা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন না। তারা বলছেন, আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে সারা দেশের তৃণমূলে সম্মেলনের প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে। এ মহাযজ্ঞে দলের নেতারা কাজ করছেন। ২১তম কাউন্সিলকে সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যেসব জেলা ও উপজেলার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সে সমস্ত কমিটির একটি তালিকা তৈরিরও কাজ শুরু হয়েছে। এর পর জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করার চিন্তা রয়েছে দলটির। সবাই প্রত্যাশা করছেন সময়মতোই হবে জাতীয় কাউন্সিল। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এর একটি গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র রয়েছে। কাউন্সিলররাই নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। আমি মনে করি আগামী দিনে যারা দলকে আরও বেশি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, আরও বেশি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন কাউন্সিলররা তাকেই নেতা হিসেবে নির্বাচন করবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে উন্নয়নের যে ধারা সৃষ্টি করেছেন তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন। আশা করি আমরা ভবিষ্যতে তেমন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার/এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগান ধারণ করে ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় কাউন্সিল। সেই সময়ের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্মেলনের আগে চমকের কথা বলেছিলেন। চমক হিসেবেই সামনে আসে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের দায়িত্ব নেয়ার পর নানাভাবে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ৬৭ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি আবারও ফিরে এসেছেন সবার মাঝে। চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে তিনি বলেন, জনগণের ভালবাসায় নতুন জীবন পেয়েছি, নতুন উদ্যমে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে কাজ করব। তার এই প্রত্যয়ে বেশ স্পষ্ট, তিনি আবারও দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এছাড়া আওয়ামী লীগের কনভেনশন অনুযায়ী পর পর অন্তত দুবার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার প্রচলন চলছে অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নিয়ে নানামুখী কথা। দলের অন্তত হাফ ডজন নেতা তাদের কর্মকান্ডে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা ও সারা দেশের নেতাকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে এ পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। ওবায়দুল কাদেরের অবর্তমানে গঠনতন্ত্র (২৫ এর গ) অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ও সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকসহ দলের দিবসকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচীতে দলের সমন্বয় করেছেন তিনি। দেশজুড়ে সাংগঠনিক সফরও করেন। ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে নিজেকে আরেকবার মেলে ধরার চেষ্টা ছিল তার। যশোর, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন। এ ছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়াও নানা কারণে সামনে চলে এসেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম। নেতাকর্মীদের কাছে সজ্জন হিসেবে পরিচিত ড. রাজ্জাক মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত নির্বাচনে দলের ইশতেহার প্রণয়নেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সম্মেলন সামনে রেখে দলীয় ও সরকারী বিভিন্ন কর্মকান্ডে ড. রাজ্জাকের তৎপরতা বেড়েছে। মন্ত্রণালয় সামলানোর পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও। দলীয় কার্যালয় ও দলীয় নেতাকর্মীর বাইরেও রাজ্জাকের নাম আলোচনা হচ্ছে। কাউন্সিল সামনে রেখে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ রংপুরের কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ দিয়েছেন। রাজধানীতে বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও দলীয় রাজনীতিতে খুব সক্রিয়। রাজনীতিতে ধারাবাহিকতা ধরে দলে ও সরকারে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তিনি। আগামী সম্মেলন ঘিরে হাছান মাহমুদের তৎপরতাও বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সরকারী বা বেসরকারী অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিচ্ছেন। বিএনপিকে ঘায়েল করে এমন বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ধারাবাহিকভাবে দলের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। রাজনীতির সজ্জন ও পরিশীলিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি সমাদৃত। বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন তিনি। সর্বশেষ ৯ মে থেকে টানা তিনদিন নিজ জেলায় একগুচ্ছ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল একটা বড় খবর। এজন্য যে এই কাউন্সিলে কিছু না কিছু থাকে। সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন বড় কথা নয় এখানে দেশের মানুষের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসা হয়। অনেক সিদ্ধান্ত হয়। দেশের মানুষও তাকিয়ে থাকে কি বার্তা দেয় তা দেখার জন্য। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল আর সম্মেলন নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সব সময়ই সময়মতো সম্মেলনের বিষয়ে নির্দেশনাও দেন। আগামীর সম্মেলনেও যে সিদ্ধান্ত আসবে তা দেশের জন্য, দলের জন্য মঙ্গলই হবে আশা করছি।
×