ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওই এলাকায় বিদ্যুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ঝুলে গেল দুই বছর

বুশিং থেকে কেরানীগঞ্জ সাবস্টেশনে আগুন, ক্ষতি এক শ’ কোটি

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৫ মে ২০১৯

 বুশিং থেকে কেরানীগঞ্জ সাবস্টেশনে আগুন,  ক্ষতি এক শ’ কোটি

রশিদ মামুন ॥ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নির্মাতা সিজিএলের বুশিং থেকে দেশের কয়েকটি সাবস্টেশনে অগ্নিকান্ডের পরও কেরানীগঞ্জের সাবস্টেশনে একই বুশিং ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেরানীগঞ্জের সাবস্টেশনটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগে পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশনটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সম্প্রতি হৈ চৈ শুরু হয়েছে। বারবার একই কোম্পানির বুশিং থেকে আগুন লাগার পরও কেন ওই কোম্পানির বুশিং ব্যবহার হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিদ্যুত বিভাগ। তদন্ত কমিটি বলছে অগ্নিকান্ডে শত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে আগামী দুই বছর ওই এলাকার মানুষের বিদ্যুতের ভোগান্তি দূর হবে না। ইতিপূর্বে ভারতীয় কোম্পানি সিজিএলের বুশিং থেকে ভেড়ামারা, আশুগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, হাটহাজারী, বাঘাবাড়ীসহ অনেক জায়গায় সিজিএলের বুশিং থেকে আগুন লেগেছে। দামে সস্তা হওয়ায় ঠিকাদার কোম্পানি বারবার ভারতীয় সিজিএলের বুশিং ব্যবহার করে। পিজিসিবি বলেছে ঠিকাদার সিমেন্স বাংলাদেশকে অনেকবার বলার পরও ইউরোপ অথবা আমেরিকার কোন কোম্পানির বুশিং তারা ব্যবহার করেনি। কিন্তু ঠিকাদার কোম্পানিকে কথা শোনাতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলছেন বিদ্যুত বিভাগের অনেকে। বুশিং থাকে ট্রান্সফর্মারের ওপরের অংশে। ধাতব তারের বাইরের অংশে থাকে চীনা মাটির প্রলেপ। এটি এক ধরনের নিরোধক। এর এক প্রান্ত বিদ্যুত লাইনের সঙ্গে অন্য প্রান্ত থাকে ট্রান্সফর্মারের তেলের মধ্যে সংযুক্ত। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে বুশিং থেকেই কেরানীগঞ্জে নির্মাণাধীন সাবস্টেশনে আগুন লেগে পুড়ে যায়। পিজিসিবি সূত্র জানায়, ১৭০ কোটি টাকায় পিজিসির নির্মাণাধীন সাবস্টেশনের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জবাসীর বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের কথা ছিল। প্রকৌশলীরা বলছেন শত শত কোটি টাকার সাবস্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিটি যন্ত্রাংশ কোথাকার কোন কোম্পানির তার মান কেমন তা দেখে কেনা উচিত। এক্ষেত্রে পিজিসিবির ঘাটতি রয়েছে। জানা গেছে, পিজিসিবির ২৩০ কেভি ক্ষমতার সাবস্টেশনে যে বুশিং ব্যবহার করা হয় তার দাম এক লাখ টাকা করে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বাংলাদেশকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা ভারতীয় কোম্পানির বুশিং ব্যবহার করেছে। এখন বলছে তারা আমেরিকান বুশিং দেবে। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে আগে অনেকবার বলার পরও তারা ভারতীয় সিজিএলের বুশিংই ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, ধরুন আমি একটি শার্ট তৈরি করব কিন্তু শার্টের বোতাম কোত্থেকে দেয়া হবে তা তো আর উল্লেখ থাকে না। এই সুযোগটাই ঠিকাদার কোম্পানি নেয়। বিদ্যুত বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় সাত বছর মাসুম আল বেরুনী পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সময়ই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবখানেই একই কোম্পানির বুশিং ব্যবহার করা হয়েছে। বারবার দুর্ঘটনা ঘটার পরও কেন ওই কোম্পানির বুশিং করে ব্যবহার করা হলো- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পিজিসিবি যেহেতু বলছে তারা নিষেধ করার পরও ঠিকাদার কোম্পানি একই বুশিং ব্যবহার করেছে। এর অর্থ হচ্ছে ‘তাদের’ অজান্তে কোন কিছু হয়নি। তারা জানতেন সিজিএলের বুশিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন অগ্নিকান্ডের কোন কিছু জানেন না বললে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, প্রকল্পে একজন পরিচালক থাকে তিনি তাহলে কী করেন? তিনি কি এসব দেখেন না। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের উর্ধতনরা খোঁজখবর নেন। তাও কী এক্ষেত্রে করা হয়নি? তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, পিজিসিবি দেখছে বুশিং থেকেই সব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তাহলে কেন তারা বুশিংয়ের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়নি। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশে সিজিএলের বুশিং ব্যবহার না করতে সবাইকে নিরুৎসাহিত করেছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যত দরপত্রে বুশিংয়ের দেশের নাম উল্লেখ থাকার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও ভেড়ামারা, আশুগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, হাটহাজারী, বাঘাবাড়ীসহ অনেক জায়গায় সিজিএলের বুশিং থেকে আগুন লেগেছে। এটা সবার জানা থাকার পরও কেরানীগঞ্জে একই বুশিং ব্যবহার অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আগুনের ব্যাপকতা বোঝাতে গিয়ে পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, ফায়ার সার্র্ভিসের দশটি ইউনিট টানা ৩ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে এ ঘটনায় এক শ’ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সাবস্টেশনটি আবার ঠিকাদার কোম্পানি নির্মাণ করে দিলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান পেতে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের মালঞ্চ এলাকায় পিজিসিবি ২৩০/১৩২/৩৩ কেভি জিআইএস সাবস্টেশনটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। নির্মাণ কাজ শেষে পরীক্ষামূলক চালুর সময়ই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
×