ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের উন্নত সড়ক, এসডিজি অর্জনে এগোচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৫ মে ২০১৯

 গ্রামের উন্নত সড়ক,  এসডিজি অর্জনে এগোচ্ছে দেশ

সমুদ্র হক ॥ মাঠ পর্যায়ে গ্রামের উন্নত সড়ক যোগাযোগ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুতের অগ্রযাত্রায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের আয় বেড়েছে। এই সময়ের গ্রামের চিত্র তাই বলে। সারাদেশে গ্রামে তিন লাখ কিলোমিটারেরও বেশি উন্নত সড়ক নির্মিত হয়েছে। ২০২১ সালের আগেই দেশের প্রতিটি এলাকায় পাকা সড়ক নির্মিত হয়ে শহর নগর মহানগরের সঙ্গে যুক্ত হবে, এমনটি আশা করা হয়েছে। বিশ^ ব্যাংকের এক জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়কের অবস্থা ভাল। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রতি এক শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকায় উন্নত সড়ক আছে ২শ’ ৩০ কিলোমিটার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একই আয়তনে উন্নত সড়ক ১শ’ ৬০ কিলোমিটার, পাকিস্তান এবং নেপালে যথাক্রমে ৩৫ ও ১৪ কিলোমিটার। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ওই সময়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের পাশাপাশি পল্লী সড়ক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে (এলজিইডি) যুগোপযোগী করা হয়। ২০১১ সালের দিকে গ্রামকে আরও উন্নত করতে লোকাল গবর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্টে (এলজিএসপি) গড়ে তোলা হয়। লক্ষ্য গ্রামের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নত করে গ্রামে শহরের সব সুবিধা পৌঁছে দেয়া। এভাবে গ্রামে পাকা সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুত পৌঁছানোর সঙ্গেই এলাকার মানুষ উন্নয়নের পথ খুঁজে পেয়েছে। সব ধরনের ফসল ফলানোর উপকরণ নাগালের মধ্যে প্রাপ্তি, সম্পূরক ফসল উৎপাদনের পথ তৈরি, কৃষি পণ্য বিপণনের সুবিধা, নারী উন্নয়নে কুটির শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে কৃষক আপন গতিতেই জীবনমান উন্নয়নে মাঠে নেমেছে। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে প্রাথমিক অবস্থায় চারটি ভাগ করা হয়। উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক, গ্রাম সড়ক-১ ও গ্রাম সড়ক-২। এর মধ্যে কিছু সড়ক মাটির রাস্তা, তবে তাও উন্নত। দিনে দিনে মাটির সড়ক পাকা হচ্ছে। গ্রামের সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দেশের যে কোন জেলা শহর থেকে উপজেলা সদর এবং সেখান থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে অতি অল্প সময়ে সরাসরি পৌঁছা যায়। পাকা সড়কের ক্রসিংয়ে ও মোড়ে শহরের মতোই বিপণি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। শহরে পাওয়া পণ্যগুলো এখন গ্রামেও মেলে। প্রতিটি গ্রামের সঙ্গে যন্ত্রচালিত যানবাহন বাস, মিনিবাস, হিউমেন হলার, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার (অটো) এমনকি ব্যাটারিচালিত রিক্সা ভ্যান, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান (গ্রামীণ নাম ভটভটি নছিমন) চলাচল করে। এসব যানবাহন প্রকারান্তরে দরিদ্রতা কমিয়েছে। একজন ভ্যানচালকের দিনমান রোজগারে জীবনমান উন্নত হয়েছে। সে ঘর গৃহস্থালিকেও এগিয়ে নিতে পারছে। তাদের বসত ভিটাতেও উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েছে। নিকট অতীতে গ্রামের সংজ্ঞা ছিল- মাটির এবড়ো-খেবড়ো পথ, কুঁড়েঘর ও গরুর গাড়ি। সেদিনের সেই চিহ্ন অনেক কমেছে। মাটির রাস্তা কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে তবে কুঁড়েঘর (বেড়ায় ঘেরা ঘরে খড়ের বা ছনের চালা) দর্শন কঠিন। এখনকার গ্রামের ঘরবাড়ি টিনের, টিনের চালায় আধাপাকা এবং পাকা। কোন এলাকায় যেমন বগুড়ার পশ্চিমাংশ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, দিনাজপুরের গ্রামে মাটির একতলা ও দোতলা ঘর এখনও দেখা যায়। তবে এই ঘরের সঙ্গে পাকা ঘর নির্মিত হচ্ছে। গ্রামে সেদিনের গোয়াল ঘর নেই। গরুর গাড়ি নেই। যন্ত্র কৃষির সরঞ্জাম যেমন পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, সেচ যন্ত্র, চারা রোপণ যন্ত্র, ধান কাটার যন্ত্র, ধান মাড়াই যন্ত্র (থ্রেসার), সবই পৌঁছে গেছে গ্রামের পাকা সড়ক ধরে। আধুনিক কৃষক গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করে ডেইরি ও পোলট্রি ফার্মের আদলে। নদী তীরবর্তী এলাকা এবং চরেও পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির অনেক চরে এখন পাকা সড়ক। যন্ত্রচালিত হালকা যান সেই চরেও পৌঁছেছে। যেন নদীর মধ্যে উন্নত গ্রাম। পাকা সড়কের সঙ্গে বিদ্যুত পৌঁছে জীবনমান পাল্টে গিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের এই উন্নয়নে লোকজন ক্রেডিট দেয় এমপি মোঃ আব্দুল মান্নানকে। গ্রামের সড়ক উন্নয়নের সঙ্গেই মানুষ নিজের গরজেই রোজগারের বাড়তি পথ খুঁজে নিয়েছে। গ্রামের নারী স্বাবলম্বী হতে কেউ বেছে নিয়েছে হাতের কাজের পণ্য। পণ্যের অর্ডার নিয়ে সময় মতো সরবরাহ করে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে, অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব বেদনা উঠলে মোবাইল ফোনের একটি কলে এ্যাম্বুলেন্স গিয়ে রোগীকে দ্রুত পৌঁছে দেয় হাসপাতালে। নবজাতক পৃথিবীতে এসেই উন্নত আলোকিত গ্রাম দেখে। দেখা গেছে, উন্নত সড়কের গ্রামে পরিবারের আয় বেড়েছে, কর্মের সৃষ্টি হয়েছে। আগে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৭ শতাংশ, সেখানে সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যুত পৌঁছার বছর তিনেকের মধ্যে তা নেমে গেছে ১৫ শতাংশে। উৎপাদিত কৃষি পণ্য দ্রুত সরবরাহে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও সচল হয়ে প্রভাব পড়েছে প্রবৃদ্ধির হারে। সঙ্গে রেমিটেন্সও যোগ হয়েছে। প্রবাসে যারা থাকেন তারাও উন্নত সড়কের পথ ধরেই গ্রামে কিছু একটা করতে পারছেন। যেখানে পাকা সড়ক হয়নি সেখানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে খুবই ধীর গতিতে। হাওড় অঞ্চলে তা লক্ষ্য করা যায়।
×