ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবহাওয়া অফিসে রেইনগেজ আছে মাত্র একটি

আগারগাঁওয়ের বৃষ্টি দিয়ে ঢাকার বৃষ্টির পরিমাণ নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৫ মে ২০১৯

আগারগাঁওয়ের বৃষ্টি  দিয়ে ঢাকার বৃষ্টির  পরিমাণ নির্ধারণ

শাহীন রহমান ॥ সারাদেশে দিনে অথবা সারা বছর কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তা পরিমাপ করে আবহাওয়া অধিদফতর। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাপ করার জন্য পরিমাপক যন্ত্র (রেইনগেজ) রয়েছে মাত্র একটি। এটি আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসে স্থাপিত। এ কারণে ঢাকায় ঠিক কি পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য আবহাওয়া অফিস এলাকায় বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর বাইরে ঢাকার কোন এলাকায় বৃষ্টিপাত কম বা বেশি হলে তার রেকর্ড আবহাওয়া অফিস করতে পারছে না। আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসে বৃষ্টিপাত না হয়ে যদি ঢাকার অন্য এলাকায় বৃষ্টি হয় তাহলে রেইনগেজ না থাকায় সেই রেকর্ড আবহাওয়া অফিসের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলছে, ঢাকায় ঠিক কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা রেকর্ড করতে হলে আগারগাঁও আবহাওয়া অফিস এলাকায় বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর বাইরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কত তা নিরূপণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি করতে হলে রাজধানীতে আরও রেইনগেজ বসাতে হবে। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই সঙ্কট নিরসনে ইতোমধ্যে আরও ২৫টি রেইনগেজ ঢাকার বিভিন্নস্থানে স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এটি স্থাপন করা হলে তখন ঢাকার সামগ্রিক বৃষ্টিপাতের একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হবে। এছাড়া আবহাওয়া অফিসকে ঢেলে সাজাতেও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে তখন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের ধরন, তাপমাত্রা, তাপপ্রবাহ,বাতাসের গতিপ্রকৃতি, আর্দ্রতা, শীতকালে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহসহ আবহাওয়ার নানা বিষয়ে দেশবাসীকে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সহজেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে কোন এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। আবার কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় কোন এলাকায় যেমন বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে আবার কোথাও বেশি হচ্ছে। আবার কোন এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাতের সময় এই ধরনের চিত্র প্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি মাত্র রেইনগেজ থাকায় বৃষ্টিপাতের এই তারতম্য নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে ঢাকায় ঠিক কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো তার সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে একটু বেশি বৃষ্টিপাত হলেই রাজধানীর কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোন কোন এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস থেকে বৃষ্টির সঠিক তথ্য পাওয় গেলে এই জলাবদ্ধতা রোধ করা সহজ হয়ে যেত। বিশেষ করে কোন্ এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় এই তথ্য আগেই জানা থাকলে জলাবদ্ধতা নিরসনের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ায় জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দেশের কোথায় কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে বা দেশের তাপমাত্রা কত উঠছে তা নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে। দিনে তিনবার বৃষ্টিপাতের তথ্য এবং তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন কোথায়, কখন কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে তাও জানিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া সাগরে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত আপডেট দেয়া হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা অনুযায়ী সংকেত প্রদান করে উপকূলীয়য এলাকাসহ দেশবাসীকে সতর্ক করা হয়ে থাকে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ফণীর শুরু থেকে আবহাওয়া অফিস এই বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে সতর্ক সংকেত প্রদান করছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়া অফিসের সতর্ক সংকেতের কারণে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। আবার ঝড় আসার আগেই লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর জন্য আবহাওয়া অফিসকে বিদেশী প্রযুক্তির ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। তারা জানায়, সাগরে কখন-কিভাবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে সেই তথ্যের জন্য জাপানের স্যাটেলাইটের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়। পাশাপাশি ভারতীয় স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর না করলেও এটিকে তারা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, নিজস্ব প্রযুক্তির সাহায্যে তারা প্রতিদিন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার পরিমাণ নির্ধারণ, বাতাসের গতি-প্রকৃতি- আর্দ্রতা পরিমাপ করে থাকেন। এছাড়া তারা সাগরে আবহাওয়ার গতি- প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য অন্য দেশের স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছেন। তবে আবহাওয়ায় অফিসের আধুনিকায়নের জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বিদেশী নির্ভরতা অনেকটা কমে আসবে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে আরও ২৫টি রেইনগেজ বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকায় ২৫টি রেইনগেজ বসানো হবে। এজন্য ইতোমধ্যে ওয়াসা এবং এলজিইডির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ওয়াসা রেইনগেজ বসানোর জন্য জায়গা দেবে। এছাড়া এটি পরিচালনাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করবে। তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে বৃষ্টিপাতের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্য বহুদিন থেকে বলা হচ্ছে। কেননা, বৃষ্টিপতের কারণে রাজধানীর জলবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোথায়, কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তা নিরূপণ করা জরুরী। কিন্তু আগারগাঁওয়ে একটি মাত্র রেইনগেজ দিয়ে বৃষ্টির সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আরও ২৫টি রেইনগেজ বসানো হলে জলাবদ্ধতা নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা সহজেই সমাধান করা সম্ভব হবে। এটি বসানো হলেই জলাবদ্ধতার বিষয়টি ওয়াসা নিরূপণ করতে পারবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আবহাওয়া সংক্রান্ত উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে আরও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আরও জনমুখী করা সম্ভব হবে। এর অংশ হিসেবে দেশে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২শ’টি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গোসাগরের বাংলাদেশ এলাকায় দেশের কোন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নেই। ফলে সাগরে আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্তের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়।
×