ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৫ মে ২০১৯

 উৎসবের প্রস্তুতি

ঈদের খুব বেশি বাকি নেই। ঈদ-উৎসবের প্রস্তুতি তাই শুরু হয়ে গেছে ঘরে ঘরে। বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিশদ উঠে এসেছে। ‘ফ্যাশনসচেতন তরুণী আর তরুণরা এখন ব্যস্ত কেনাকাটায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় রাজধানীর মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিং মলগুলোয় এখন কী প্রচন্ড ভিড়। ঢাকায় প্রায় দুকোটি লোক বাস করে। আর ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় কেনাকাটা করতে সারাদেশ থেকেই হাজার হাজার নর-নারী চলে আসেন। ফলে রীতিমতো উপচে পড়ে ভিড়। ঈদ-উল-ফিতরের সময় মানুষ উৎসবের প্রস্তুতির জন্য পায় দীর্ঘ সময়। একদিকে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা চলে। পাশাপাশি মানুষ ঈদের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। অনেকে বলেন, ঈদ হলো শুধু ছোটদের। তারাই নতুন জামা-জুতো পরবে, আনন্দ করবে, ঘুরে বেড়াবে। কথাটা যে শতভাগ অসত্য এমনটা বলা যাবে না। কারণ ছেলেবেলায় ঈদের খুশিই থাকে অন্যরকম। বড় হয়ে দায়িত্ব বাড়ে। ছোটদের ঈদ আনন্দের সুযোগ সৃষ্টি করা তখন বড়দের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলে বড়রা যে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত কিংবা উৎসব থেকে অবসর নিয়েছে- বিষয়টি এমনও নয়। একেক বয়সে উৎসবের ধরন বদলে যায়। ঘরে বসে ঈদের উৎসবে নিকটজনদের সঙ্গে মেতে ওঠা তো রয়েছেই। সেজন্য ভালমন্দ খাবার যোগানোর সুবন্দোবস্ত রাখতে হয়। আবার বাইরে ঘোরাফেরাও আছে। বন্ধুদের বাসায় যাওয়া, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া। ফলে যাই করি না কেন, উৎসবের ধরন যেটাই হোক না কেন, সেখানে কেনাকাটার ব্যাপার থাকবেই। ঘরের ছোট সদস্যদের যেমন নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা না হলে চলেই না। তেমনি আবার তরুণ-তরুণীদেরও চাই ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্যান্য উপকরণ। তরুণী হলে বিশেষ সাজগোজের ব্যাপার থাকে। অনেকে ম্যাচিং করে অলঙ্কারও কিনে থাকেন। এইসব কেনাকাটার ভেতর দিয়ে, পোশাক ও অলংকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উৎসবের আয়োজন জমে উঠতে থাকে। এক ধরনের প্রতিযোগিতাও যে চলে, সেটি অস্বীকার করা যাবে না। বন্ধুদের মধ্যে চলে নতুন পোশাক পরস্পরকে দেখিয়ে মজার মজার মন্তব্য আদান-প্রদান। এমনও চল রয়েছে সমাজে যে একদল বন্ধু ঈদের দিনে পরিধানের জন্য একই ধরনের পোশাক কিনে থাকেন। বলছিলাম বড়দের কথা। ঈদের নামাজ পড়ার জন্য অন্তত চাই নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি। এক্ষেত্রে দেশী ফ্যাশন হাউসের বিরাট কদর। গৃহিণীরা অবশ্য পছন্দ করেন বাইরের শাড়ি-কাপড়। ঈদের উৎসব প্রস্তুতি ঘিরে ঈদের বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। গৃহকর্মীটির জন্যও ঈদে নতুন পোশাক চাই। ঈদ তো সবার, এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। তবে মানবিক কারণে একটু আশপাশেও তাকাতে হয়। কোন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত, অথচ ঈদের বাড়তি ব্যয় করার সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের জন্য ঈদ উপহার কেনার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। এই আনন্দ ঈদ উপলক্ষেই পাওয়া। বাস্তবতা হলো এখন লোকের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। ফলে চাহিদা ও যোগানের নীতি অনুযায়ী ঈদ-পণ্যের প্রসার হচ্ছে, পসারও জমে উঠেছে বেশ। ঈদের আনন্দ একা-একা করা যায় না। সবাইকে নিয়েই করতে হয়। সমাজের বিত্তহীন ও দুর্দশায় পতিত মানুষ বা পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ালে চিত্তসুখী অর্থবান মানুষের ঈদও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই উৎসব-প্রস্তুতিতে শুধু নিজের কথা নয়, ভাবতে হবে অসামর্থ্যবান উৎসব-উন্মুখ মানুষের কথাও। তার খুশি রচনার জন্য হতে হবে উদ্যোগী। কেননা মানুষ মানুষের জন্য। উৎসবের দিনেও এ কথা মনে রাখা চাই।
×