ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁকখালী নদীতে দখল প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ২৫ মে ২০১৯

বাঁকখালী নদীতে দখল প্রতিযোগিতা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাঁকখালী নদীর দখল প্রতিযোগিতা। পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে জমির মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় দখলবাজরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাঁকখালীর দু’পাড় দখল করতে। তারা গিলে খাচ্ছে নদীর উভয় পাড়। বর্তমানে সক্রিয় দখলদার সিন্ডিকেট। তাদের নেতৃত্বে শহরের পেশকার পাড়া বাঁকখালী তীর দখল করে গড়ে উঠছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যদের নদী দখল করে কেউ আবাসন ব্যবসা, কেউবা বানিয়েছে চিংড়িঘের ও কেউ করছে প্লট বিক্রি। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে লবণের কারখানাও। সরকারী সম্পত্তির ওপর রয়েছে দখলদারদের মাছের আড়ত, করাতকল, শুঁটকিমহাল, বরফকলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ দখলদারদের তালিকা করে চাপচাপ রয়েছে। সে তালিকায় ৯২ জনের নাম থাকলেও তবে দীর্ঘদিন ধরে দখলদারদের উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শহরের পেশকারপাড়ায় নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, পাড় ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য বিভিন্ন আকারের প্লট বানানোর কাজ চলছে। ভাগ অনুসারে কোন প্লট চার কাঠার আবার কোনোটি পাঁচ কাঠার। কয়েকটি প্লটে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। শহরের বিভিন্ন পাহাড় থেকে মাটি এনে ভরাট হচ্ছে এসব প্লট। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে একসময় নদী ছিল। প্লট ও স্থাপনা রক্ষায় দখলদাররা নিজেদের টাকায় নদীর জোয়ারের পানি ঠেকাতে মাটি ফেলে বাঁধও নির্মাণ করেছে। নদীর স্রোতধারার মাত্র ২০ মিটারের মধ্যে চারুকা আর্টের স্বত্বাধিকারী নজরুলের নেতৃত্বে একটি ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তার পাশেই তার ভাইও স্থাপনা নির্মাণ করছে। নজরুলের নেতৃত্বে আশপাশে সোহেল, দেলোয়ার হোসেন, শাহীনা আক্তার, শহরের হকার মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকের হোসেন, এন্ডারসন সড়কের ব্যবসায়ী সিরাজুল হক ভবন নির্মাণ ও প্লট বানানোর কাজ করছে। ইতোমধ্যে এখানে প্রায় ২৫-৩০টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) থেকে অনুমতিও নেয়া হয়নি। নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও। স্থাপনা নির্মাণকারী নজরুল বলেন, অনেকের দেখাদেখি তিনিও ভবন তৈরি করেছেন। এ পর্যন্ত কেউ বাধা দেয়নি। তার মতো সোহেল, জাকের, সিরাজুল হক, দেলোয়ার হোসেনও একই কথা বলেন। কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, কস্তুরাঘাট, নূরপাড়া, পেশকারপাড়া, টেকপাড়া, নুনিয়াচটচড়া, নতুন বাহারছড়া, মাঝিরঘাট এলাকায় গত কয়েক বছরে বাঁকখালী নদীর সীমানার প্রায় ৯৮ একর জমি দখল করে নানা অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার বলেন, সরেজমিনে গিয়ে পেশকার পাড়ায় যেসব প্লট ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে শীঘ্রই তা বন্ধ করা হবে। সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ওখানে বার বার অভিযান চালানো হয়েছে। তবুও দখলদাররা থামছে না। এবার নতুন করে অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, কেউ আইনের উর্ধে নয়। বাঁকখালীতে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব) ফোরকান আহমেদ বলেন, বাঁকখালী নদীর বুকে কিংবা তীরে ভবন নির্মাণের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কারা এই ভবন নির্মাণ করেছেন-তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×