ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল উৎখাতের ছক

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ২৫ মে ২০১৯

তৃণমূল উৎখাতের ছক

ভারতে সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ফল ঘোষণার পর প্রথমবারের মতো কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদির জোটের কাছে মায়াবতী-অখিলেশ জোট ধরাশায়ী হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি জোট পরাজিত হলে মায়াতীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে মায়াবতী বলেন, উত্তর প্রদেশে ইভিএম কারচুপি হয়েছে। এ জন্যই সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি জোটের পরাজয় হয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএম কারচুপির সাহায্যে নির্বাচনের ফল হাইজ্যাক করেছে গেরুয়া শিবির। আবার বিশেষ প্রক্রিয়ায় চক্রান্তের মাধ্যমে বিজেপি ভোট আদায় করেছে। তার মতে, বিজেপির এই কর্মকান্ডে ভারতে গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করল মোদি শিবির। খবর এনডিটিভি অনলাইনের। এবারের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গে অভাবনীয় ফল করেছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গ থেকে সব আসন পাওয়ার ঘোষণা দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ভারতের স্বাধীনতার পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক ১৮ আসনে জয় পেল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই সাফল্যের পর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল সরকারকে ফেলে দেয়ার ছক কষা শুরু করেছে বিজেপি শিবির। এক সময় মমতা ব্যানার্জির ডান হাত বলে পরিচিত, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেয়া মুকুল রায়সহ স্থানীয় বিজেপি নেতারা এই ছক কষছেন। এই নির্বাচনে মুকুল রায় ইতোমধ্যে অপর একটি ছক কষে সফল হয়েছেন। ছকটি ছিল নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূলের প্রচার দলে নিজ দলের লোক ঢুকিয়ে দিয়ে তান্ডব চালানো। বিজেপির এসব কর্মী বাইরে তৃণমূলের হয়ে কাজ করলেও অন্তরালে তারা গেরুয়া শিবিরের হয়ে কাজ করেছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর একই দিন রাতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাজ্য বিজেপির এই চাণক্য। তিনি বলেন, রাজ্য তৃণমূলের একটা বড় অংশকে গোপনে বিজেপির হয়ে কাজ করানোই ছিল চ্যালেঞ্জ। তার কথায়, এসব লোক বাইরে মমতা ব্যানার্জির গুণগান করলেও ভেতরে মোদির হয়ে কাজ করেছে। মুকুল রায় বলেন, এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এসব লোককে প্রকাশ্যে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো। তার মতে, এসব লোক মোদি শিবিরে ভিড়লে আগামী ২০২১ সালের আগেই তৃণমূল সরকারকে ফেলে দেয়া সম্ভব হতে পারে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও মুকুল রায়ের সুরে কথা বলেন। বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসায় দিলীপ ঘোষকে মন্ত্রী করার গুঞ্জন বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিজেপি নেতা সাফ জানান, আমি আপাতত পশ্চিমবঙ্গ থেকে দূরে গিয়ে অন্য দায়িত্ব সামলাতে চাই না। আমার আপাতত ইচ্ছা পশ্চিমবঙ্গকে তৃণমূল মুক্ত করা। মমতা ব্যানার্জির কব্জা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে রক্ষা করা। দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সুর মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিলীপ ঘোষের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ঠিক হবে না। তিনি রাজ্যের দায়িত্ব পালন করুন। কারণ, দিলীপ ঘোষ ছাড়া মমতা ব্যানার্জিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করা যাবে না। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই ফের বিস্ফোরক মন্তব্য বিজেপির জয়ী প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের। তিনিও নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। তার দাবি, ১শ’ তৃণমূল বিধায়কের দলবদল শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর সেই কাউন্ট ডাউনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আরও দাবি, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দলবদল করার জন্য সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন ৪০ বিধায়ক। আর তাদের সঙ্গে আরও ৬০ তৃণমূল বিধায়ক যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে বলে শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানান অর্জুন সিং। ভারতজুড়ে চলা গেরুয়া সুনামি আছড়ে পড়েছে পশ্চিববঙ্গেও। রাজ্যের নেত্রীকে ধাক্কা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের সাংসদ সংখ্যা ২ থেকে ১৮ করেছে বিজেপি। এর পেছনে মুকুল এফেক্ট কাজ করেছে বলে ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খোদ তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা। এই অবস্থায় অর্জুন সিংয়ের এ ধরনের মন্তব্যে রীতিমত আতঙ্কে তৃণমূল। জরুরী বৈঠক ডেকেছেন মমতা এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণে শনিবার নিজ বাড়িতে জরুরী বৈঠক ডেকেছেন মমতা ব্যানার্জি। তার কালিঘাটের বাড়িতে ডাকা ওই বৈঠকে দলটির বিজয়ী ও পরাজিত নেতা এবং জেলা সভাপতিরা উপস্থিত থাকবেন। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।
×