ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর্তব্য পালনে বিচ্যুত হবেন না নুসরাত জাহান রুহি

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২৪ মে ২০১৯

কর্তব্য পালনে বিচ্যুত হবেন না নুসরাত জাহান রুহি

অনলাইন ডেস্ক ॥ গেরুয়া-ঝড়ের মধ্যে দলের গড় অটুট রেখেই জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন তিনি। তবু দলের ‘অপ্রত্যাশিত ফল’-এ মন খারাপ। তবে বসিরহাটের জন্য কর্তব্যে পালনে বিচ্যুত হবেন না নুসরাত জাহান রুহি। আর সেই প্রশ্নে দুর্নীতিকে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগই দেবেন না তিনি। তেমনটাই দাবি বসিরহাটের নতুন সাংসদের। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোলেন নুসরাত। তখন জয়ের ব্যবধান আড়াই হাজার। ফিরোজা ফুলের নকশা তোলা হাল্কা গোলাপি শাড়ি, ফুলহাতা গোলাপি ব্লাউজ় আর খোলা চুলে সতেজ তারকা জানালেন, ‘‘জয়ের বিষয়ে আমি পজিটিভ।’আশার কথা শুনিয়েই বসিরহাটের দিকে ছুটল দুধসাদা এসইউভি। যেতে যেতেই সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবধান অনেকটা বাড়ার পরে গণনা কেন্দ্রে যাবেন তিনি। বসিরহাট যাওয়ার পথে মিনাখাঁ বামনপুকুর বাজারে মিনিট দশ-বারোর জন্য থামলেন তারকা। ঘিরে ধরল জনতা। তাদের বক্তব্য, ‘দিদি, এখানে যাঁদের তেতলা বাড়ি, তাঁরাও ঘর পান!’ বুঝতে অসুবিধা হল না বসিরহাটের নতুন ‘দিদি’র। বল মাটিতে পড়ার আগেই বললেন, ‘‘আমার ও-সব লোভ নেই।’’ এর পরে গাড়ি আর কোথাও দাঁড়ায়নি। বেলা ১২টা নাগাদ বসিরহাটে পৌঁছে টাকির একটি গেস্ট হাউসে ওঠেন নুসরাত। প্রায় চার ঘণ্টা ঘরে বসে ল্যাপটপে চোখ রেখেছেন তিনি। বাবা-মামা ও সঙ্গীদের সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটিয়েছেন। মাঝেমধ্যে স্থানীয় দলীয় কর্মীরা এসে দেখা করে গিয়েছেন। নিজের জয়ের ব্যবধান ক্রমশই বাড়ছে। কিন্তু দলের অপ্রত্যাশিত ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন বারবার। অতিথিশালায় থাকা দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসিরহাটে জয়ের ব্যবধান নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ তা থামিয়ে দিলেন নুসরাত। অন্য জায়গার ফল নিয়ে উৎকণ্ঠা গোপন করতে পারলেন না তিনি। এই পরিস্থিতিতে দলের পাশে থাকবেন কী ভাবে? ‘‘আমি তো বরাবর এই দলই করি,’’ ভেবেচিন্তে বললেন নুসরত। এরই মধ্যে খবর এল, ব্যবধান দু’লক্ষ ছাড়িয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৩টে ৫০ মিনিট। রাজ্যের কনিষ্ঠতম সাংসদ নুসরত প্রথমেই বাবাকে সবুজ আবির ছুঁইয়ে আশীর্বাদ চাইলেন। একদা বাম রাজনীতি করা বাবা হাজি মহম্মদ শাহজাহান বললেন, ‘‘বসিরহাটের মানুষকে স্যালুট-সালাম জানাই। নুসরত খুব পরিশ্রম করেছিল। বাকিটা উপরওয়ালা করেছেন।’’ আর বাবার বুকে মাথা দিয়ে আদরের মেয়ে জানালেন, ‘‘আমি রাজনীতি বুঝি না। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’ সেই কাজ কী ভাবে হবে, দলের সঙ্গে বসেই সেটা স্থির করবেন নুসরত। বললেন, ‘‘সবটাই টিমওয়ার্ক। একসঙ্গে সকলে মিলে বসে এবং দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শ মেনেই তা করা হবে।’’ অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ সহযোদ্ধাদের নিয়ে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের গণনা কেন্দ্র ভ্যাবলা পলিটেকনিক কলেজের উদ্দেশে রওনা হলেন নুসরত। গত দেড় মাসে তাঁকে দেখতে যে-ভাবে ভিড় জমেছিল, এ দিনও গণনা কেন্দ্রে বসিরহাটের তারকাকে দেখতে গণনা কেন্দ্রের আশেপাশে তেমনই জমায়েত। মাত্র মিনিট দশেক গণনা কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন তিনি। সমর্থকদের অনুরোধে গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসইউভি-র হুড খুলে রোড শো করতে বাধ্য হলেন নুসরাত। তখনও তিন লক্ষ ২২ হাজারের বেশি জয়ের ব্যবধান তৈরি হয়নি। ইছামতীর পাড়ের রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়ার সাহস দিয়েছিলেন ‘দিদি’ (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। সেই দিদিকেই জয় উৎসর্গ করলেন তারকা। গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘‘মাটি আর দিদিকে জয় উৎসর্গ করলাম।’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×