ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জিং পেশায় সারাহ আলী

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৪ মে ২০১৯

 চ্যালেঞ্জিং পেশায় সারাহ আলী

জীবনের পথ চলার প্রেরণা বাবা-মা দুজনের কাজ থেকে পেলেও কাজে মনোযোগী হওয়ার প্রেরণা পান বাবা রেজা আলীর কাছ থেকে। যিনি কিনা বাংলাদেশের প্রথম সারির বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটোপির সৃষ্টিকর্তা। তখন বাংলাদেশে টিভি ঘরে রাখার লোকই ছিল হাতেগোনা। সেই সময়ে নাটক কিংবা সিনেমা ছাড়া এদেশের দর্শক তেমন কিছু বুঝত না। সেই দর্শকদেরই বিজ্ঞাপন দেখতে আগ্রহী করে তোলা প্রতিষ্ঠানটির নাম বিটোপি। সামাজিক সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন থেকে পণ্য প্রচার প্রসারের বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সব ধরনের সরকারী-বেসরকারী বিজ্ঞাপন নির্মাণ করত বিটোপি। চমৎকার থিমের বিজ্ঞাপনগুলোর ডায়লগ দ্রুতই এদেশের মানুষের মুখে মুখে ছড়াতে লাগল। একের পর এক জনপ্রিয় হতে লাগল এসএমসি ওরস্যালাইন, বাটা, সিঙ্গার, ব্রিটিশ, এয়ারওয়েজ, রাজা কনডম, টোব্যাকো কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো। সে ধারা এখনও অব্যাহত আছে, এয়ারটেল, বিএসআরএম, পাঠাও, কাজী এ্যান্ড কাজী টিজিপিসহ এদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন নির্মিত হচ্ছে বিটোপির মাধ্যমে। সেই সময়ে বাবার সঙ্গে অফিসে এসে খেয়াল করতেন কাজের ধারাগুলো। স্কলাস্টিকায় প্রাথমিক পাঠ চুকিয়ে পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য চলে যান আমেরিকাতে। সেখানে এনথ্রোপলজিতে পড়াশোনা করলেও মাস্টার্স করেন মিডিয়া ইকোলজির উপর। ২০০০ সালে ফিরে আসেন নিজ দেশে। এসেই মনোযোগী হন বাবার বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজে। পারিবারিক সূত্রে গার্মেন্টস ব্যবসা থাকলেও তিনি তাতে আগ্রহবোধ করেননি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে অন্য দুই ভাই গার্মেন্টস ব্যবসা দেখছেন কিন্তু সারাহ আলী আটকে গেলেন বিটোপির মোহে। দিনরাত সময় দিতে থাকলেন কাজটি বোঝার জন্য। অন্যান্য স্টাফদের মতোই তিনি বাবার প্রতিষ্ঠানে একজন সাধারণ স্টাফ হিসেবেই নিয়োগ নেন। এরপর থেকে নিজ যোগ্যতাতেই তিনি আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। বাবার ¯েœহচার্য হওয়ার সুবাদে নয় বরং নিজ দক্ষতায় এই পোস্টটি তিনি আয়ত্তে করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এ কারণেই হয়ত নারী হয়েও পিছপা হতে হচ্ছে না তাকে। কারণ কাজটি তিনি বেশ ভালভাবেই শিখে নিয়েছেন। যে কারণে তার জানা আছে বিজ্ঞাপন জগতের অলি-গলিগুলো। নারী হয়ে এত চাপ সামলানোর ব্যাপারে সারাহ আলী বলেন, আমি সব সময় কাজকেই প্রাধান্য দেই। কে নারী কে পুরুষ তা ভাবি না। আমার প্রতিষ্ঠানেও যারা দক্ষতার প্রমাণ দিতে সক্ষম আমি তাদের আরও বেশি সাপোর্ট করি। সে ছেলে হোক বা মেয়ে। তবে আমি এখনও একটা বিষয় বেশ উপলব্ধি করি সেটা হলোÑ এখনও আমাদের দেশের মানুষ মেয়েদের সঙ্গে কর্পোরেট মিটিং এ ইজি ফিল করে না। যে কারণে অনেক সময় মিটিংগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেকেই এখনও মনে মনে ভাবেন ওরা মেয়ে মানুষ। ওরা আর কতদূর কি পারবে? তবে আশার কথা হচ্ছে দিনকে দিন মানুষের ভাবনা পাল্টাচ্ছে, এবং মেয়েরাও প্রমাণ দিতে সক্ষম হচ্ছে তার কি পারে আর কি পারে না। নিজ কর্মদক্ষতায় মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। শিক্ষা-দীক্ষা এবং কর্মদক্ষতায় মেয়েরা কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। বরং অনেক জায়গাতেই এগিয়ে। আর আমিও প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকি বলে কোন ঝড়ই আমাকে ভেঙ্গে দিতে পারে না। মেয়েরা যে অনেক কিছু পারে আমি আমার নিজ জায়গা থেকে এর কিছুটা হলেও প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি।
×