ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন ‘শেখার’ প্রশিক্ষণ!

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২৪ মে ২০১৯

স্বপ্ন ‘শেখার’ প্রশিক্ষণ!

স্বপ্নের রকমফের : স্বপ্নে প্রকৃতির নিয়মও খাটে না। এমনকি গল্পের গরু দিব্যি গাছে উঠতে পারে। তখন অদ্ভুত সব পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা হয়। সাধারণত স্বপ্ন দেখার সময় আমরা সে বিষয়ে সচেতন থাকি না। কিন্তু যখনই টের পাই যে আমরা আসলে স্বপ্ন দেখছি, তখনই সেটা লুসিড ড্রিম বা দিবাস্বপ্ন হয়ে ওঠে। আমরা কিন্তু সেই স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রায় অর্ধেক মানুষের কমপক্ষে একবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের নাইমেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন ড্রেসলার দিবাস্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটি সত্যি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বিরল ঘটনা। বিশেষ করে স্বপ্নের সার্বিক ক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ স্বপ্নের সম্ভবত এক জৈব ক্রিয়াও রয়েছে। সেটা সত্য হলে তার নিউরো-বায়োলজিকাল ভিত্তি কত গভীর, তা জানতে হবে। লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভবত স্বপ্ন ও সার্বিকভাবে ঘুমের ক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারছি।’ লুসিড ড্রিমের রহস্য : লুসিড ড্রিমের সময়ে মস্তিষ্কে ঠিক কী ঘটে, মার্টিন ড্রেসলার তা জানতে চান। সেই লক্ষ্যে তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের এমআরটি পাইপে ঘুমাতে দিয়েছেন এবং একটি ক্ষেত্রে ইইজি যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। মস্তিষ্কের কোন কোন অংশ সক্রিয় রয়েছে, তাঁদের ব্রেনওয়েভের মাধ্যমে তা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ স্বপ্নের তুলনায় লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তিবোধ কাজ করে। ড. মার্টিন ড্রেসলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মস্তিষ্কের কার্যকলাপের মধ্যে সেটা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কপালের ঠিক পেছনের অংশে আমরা উল্লেখযোগ্য মাত্রার বাড়তি কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছি। প্রায় জেগে থাকার অবস্থার মতো সজাগ থাকে।’ আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে গবেষকরা লুসিড ড্রিম শেখার নতুন প্রক্রিয়ার খোঁজ করছেন। ড. ড্রেসলার বলেন, ‘একটি প্রচলিত কৌশল হলো, দিনে বেশ কয়েকবার নিজেকে প্রশ্ন করা-আমি কি জেগে আছি, না স্বপ্ন দেখছি? বিশেষ করে অস্বাভাবিক বা স্বপ্নময় পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন তোলা উচিত। যথেষ্ট ঘন ঘন এমনটা করলে বিষয়টি স্বপ্নে পরিণত হয়। তখন স্বপ্নের মধ্যেও নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি জেগে আছি, না স্বপ্ন দেখছি?’ স্বপ্ন ও বাস্তবের মেলবন্ধন : যুক্তির অভাব বা অদ্ভুত পরিস্থিতি স্বপ্নের লক্ষণ হতে পারে। স্বপ্নের সময় কোন বস্তু বা বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে দেখলে তা অস্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন দিনে বেশ কয়েকবার নিজের হাতের দিকে তাকানোর অভ্যাস থাকলে কোন এক সময় স্বপ্নের মধ্যেও তা করার প্রবণতা বাড়বে। স্বপ্নের মধ্যে হাতে পরিবর্তন ঘটে। ফলে তখন স্পষ্ট বোঝা যায়, যে আমরা স্বপ্ন দেখছি। ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মতো কম্পিউটার সিমুলেশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ চশমা পরলে সব দৃশ্য আসল মনে হয়। মার্টিন ড্রেসলার এর মাধ্যমে লুসিড ড্রিম শেখার কাজ সহজ করে তুলতে চান। তিনি বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে এমন স্বপ্নময় পরিস্থিতি খুব বিরল। ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ক্ষেত্রে আমরা সহজে প্রোগ্রাম করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও মাঝেমাঝে কিছু অদ্ভুত পরিস্থিতির স্বাদ পাচ্ছেন। ঠিক এমন সব মুহূর্তে তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, আমি কি জেগে আছি না ঘুমাচ্ছি?’ একজন স্বেচ্ছাসেবীর সিমুলেটেড স্বপ্নের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তাকে ফাইল সাজানোর কাজ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অদ্ভুত হয়ে পড়লে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করছেন, তিনি জেগে আছেন না স্বপ্ন দেখছেন। এক সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা সপ্তাহে তিন বার ৪৫ মিনিট ধরে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গবেষণাগারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ড. ড্রেসলার বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। সাধারণ প্রশিক্ষণের তুলনায় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ট্রেনিং অনেক বেশি কাজে লাগছে বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে।’ এই প্রক্রিয়ার কল্যাণে ভবিষ্যতে হয়তো আরও বেশি মানুষ সচেতনভাবে নিজেদের স্বপ্ন গড়ে তুলতে পারবেন। সাত-সতেরো প্রতিবেদক
×