ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গত ঈদে ছিল মাস্তানি দিলওয়ালে-এবার পরকীয়া

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২৪ মে ২০১৯

 গত ঈদে ছিল মাস্তানি দিলওয়ালে-এবার পরকীয়া

রহিম শেখ ॥ ‘উদ্ভট’ ও ‘অদ্ভুদ’ সব নামের পোশাকে ছেয়ে গেছে নগরীর বিপণি বিতান, শপিংমল ও মার্কেটগুলো। ঈদ আসার আগেই মেয়েদের ‘পরকীয়া’ নামের একটি পোশাক নিয়ে চলছে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনা। পোশাকটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। গত ঈদে ছিল মাস্তানি, দিলওয়ালে, পদ্মাবতী, মাসাককালি, বজরঙ্গি নাম দেয়া পোশাক। মূলত ঈদ উৎসবকে পুঁজি করে মুনাফা বা অধিক বাণ্যিজের লোভে প্রতিবছরই কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী পোশাক নিয়ে এমন ‘নামের’ ব্যবসা করছেন। এসব পোশাকের সবই আমদানিকৃত। এরমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় পোশাক। উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে পাকিস্তানী, চীনা এবং থাইল্যান্ডের পোশাকেরও। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ঝকমকে বিদেশী পোশাক দিয়ে দোকান সাজানো হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় হিন্দী-বাংলা সিনেমাসহ টিভি চ্যানেলগুলোর মেগাধারাবাহিক নাটক ও সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের পরনের পোশাকের চাহিদা এখন তুঙ্গে। একশ্রেণীর মৌসুমি ব্যবসায়ী আমদানি করছেন ভারতীয় এসব পোশাক। আমদানির পর বিভিন্ন নামে লাগানো হচ্ছে ‘ট্যাগ’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীদের জন্য অন্যতম মার্কেট রাজধানীর গাউছিয়া, নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট এবং বসুন্ধরা সিটি, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, টুইনটাওয়ার, মালিবাগ সুপার মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজাসহ সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি দোকানেই নানা ধরনের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস এবং বাচ্চাদের পোশাক সাজানো হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পাকিস্তানী ও চীনা পোশাক থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা ভারতীয় পোশাকের দিকে। শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের ঈদ বাজারেও একচেটিয়া দখল ভারতীয় পোশাকের। জানা গেছে, গত প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশে ঈদের বাজারে পোশাকের নাম দেয়ার একটা সংস্কৃতি চলে আসছে। ২০০৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একই ধরনের বড় ঘের দেয়া কামিজ কখনও জিপসি, কখনও আনারকলি কখনও পাখি জামা নামে বাজারে এসেছে। কিন্তু পোশাকের ধরন একই ছিল সব সময়। গত বছর ঈদ বাজারে ছিল মাস্তানি, দিলওয়ালে, পদ্মাবতী, মাসাককালি, বজরঙ্গি নাম দেয়া পোশাক। এবার এসেছে ‘পরকীয়া’ নামের একটি পোশাক। যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পাশাকটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। বসুন্ধরা সিটির তানহা সিটির মালিক মাসুদ আলম বলেন, বিক্রি বাড়ানোর জন্য অনেক ব্যবসায়ী ফন্দি করে ভারতের বিভিন্ন জনপ্রিয় সিনেমা ও সিরিয়ালের নায়িকাদের নামের সঙ্গে মিল রেখে পোশাকের নামকরণ করেন। আবার অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের পোশাক শুনলে ভ্রু কুঁচকান। তাই ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য স্টার জলসাসহ ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে জনপ্রিয় হওয়া ধারাবাহিকের কোন চরিত্রের নামে পোশাকের বাহারি নাম দেন। ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ভারতীয় বাহারি নামের এই পোশাকগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একই নাম নিয়ে ভারতের বাজারে খুঁজলে এই নামের কোন পোশাক পাওয়া যাবে না। এই নামের কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশী বিক্রেতাদের। চাঁদনী চক মার্কেটের ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার আবু ফয়েজ বাচ্চু বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশ ভাল। বিক্রিও হচ্ছে জোরেশোরে। দেশীয় পোশাকও বিক্রি হচ্ছে তবে ভারতীয়-পাকিস্তানী ব্র্যান্ডের তুলনায় খুব বেশি নয়। ন্যাশনাল ফ্যাশন হাউস এ্যান্ড গাউছিয়া’র ম্যানেজার মোস্তাফা মিয়া জানান, এ মার্কেটটির দেশে-বিদেশে পরিচিতি রয়েছে, মহিলা ও শিশুদের পোশাক মার্কেট হিসেবে রাজধানীতে এটিসহ চাঁদনী চক মার্কেট বিখ্যাত। সিরিয়াল ও সিনেমায় জনপ্রিয় চরিত্র ও নায়িকাদের ড্রেসগুলো বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতা জানান, এখানকার মার্কেটগুলোতে ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। যার যেমন পছন্দ, ওই ডিজাইন দেখে কোড নম্বর বললেই দোকানিরা তাৎক্ষণিক বের করে দিচ্ছেন পছন্দের পোশাকটি। এতে ব্যবসায়ীদেরও হাজারটা পোশাক বের করে দেখানোর ঝামেলা থাকছে না এবং ক্রেতাদের পোশাক বাছাই করতে সময় নষ্ট হচ্ছে না। সোমবার ধানম-ি থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে আসা সুমনা হক জানান, তার স্বামী দুবাই থাকেন। ঈদ মার্কেটের জন্য টাকা পাঠিয়ে বলেছেন আগেভাগেই ঈদের শপিং করে নিতে। ধানম-ি থেকে কেনাকাটা করতে আসা সায়েম হোসেন বলেন, এবার দামটা বেশি মনে হচ্ছে। দুই চারশ টাকা বাড়লে সেটা সহনীয় হতো, কিন্তু যা দাম চাচ্ছে, তাতে মনে হয় না এখান থেকে কাপড় কিনতে পারব। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ফ্যাশন হাউস সেইলরের বিক্রয়কর্মী মৌমিতা জানান, চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ‘এক্সক্লুসিভ কালেকশনগুলো’ তাদের বেশি চলছে। এসব ড্রেসের জামার সামনের অংশ কাপ্তানের মতো, কিছুটা ছোট আর পেছনের অংশটি বড়। বসুন্ধরার একটি দোকান থেকে কুর্তি কিনেছেন নাবিলা হোসেন। তিনি বলেন, এগুলোর ডিজাইনটা আনকমন লাগল, তাই কিনলাম। আসলে ড্রেসে একটু নতুনত্ব না থাকলে কিনতে ইচ্ছা করে না। মিরপুর ২ নম্বরের ফ্যাশন হাউস ভগ’র বিক্রেতা হীরা জানান, তারা বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি, থ্রি পিস বিক্রি করছেন। তিন হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকার মধ্যের ড্রেসগুলোই বেশি চলছে।
×