ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৪ মে ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ঈদের প্রস্তুতি চলছে। সারা দেশের মতো রাজধানী শহরেও উৎসবের আমেজ। মার্কেট, শপিংমল মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। তারও আগে দোকানগুলোতে উঠেছে নতুন জামা-কাপড়। কতশত ডিজাইন! বিপুল সম্ভার থেকে পছন্দের পোশাক খুঁজে নিচ্ছেন ক্রেতা। ছেলে-বুড়ো সবাই ব্যস্ত। হ্যাঁ, ডজন ডজন জামা কাপড় হয়ত আলমারি বা ওয়ার্ডরবে তোলা আছে। সে যতই থাক, ঈদে নতুন চাই। নতুনের পেছনে ছুটছে শহুরে মানুষ। বিশেষ করে নারীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটায় ব্যস্ত। এ কাজ বরাবরের মতোই উপভোগ করছেন তারা। নিজের জন্য বেছে বেছে কিনছেন। আত্মীয়- স্বজনকেও ঈদে উপহার দিতে হবে। না দিলেই নয়। হাতে তাই লম্বা ফর্দ। বেশ ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। অবশ্য কেউ ক্লান্ত হচ্ছেন না। দেখে অন্তত সেটি বোঝার উপায় নেই। ঈদ এত আনন্দের! ধানম-ির ২৭ নম্বর সড়কে অনেক নামীদামী পোশাকের শোরুম। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দারুণ জমে উঠেছে কেনাকাটা। ফ্যাশন হাউস লারিভের শোরুমে কথা হচ্ছিল আসমা নামের এক তরুণীর সঙ্গে। সদ্য বিবাহিত, বলছিলেন, সারা বছরই জামা-কাপড় কেনা হয়। এর পরও ঈদের কেনাকাটা অন্যরকম আনন্দ দেয়। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। এখনও অবশ্য নিজের জন্য কিছু কিনিনি। কেনা হয়নি। তবে বাবা,মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর, ননদ এবং তাদের সন্তানদের জন্য পোশাক কিনেছি। ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধুর জন্যও কিনবেন বলে জানান তিনি। একইদিন বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে কথা হয় এক পরিচিতজনের সঙ্গে। নাম আবু করিম। একটি বেসরকারী ব্যাংকে কাজ করেন। বলছিলেন, কাজের চাপে শপিংয়ে বের হতে পারি না। আজ অফিস শেষ করে কোনরকমে বের হয়েছি। আগেই স্ত্রী চলে এসেছিল। আমি জয়েন করলাম পরে। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে অনেক আত্মীয়-স্বজন। তাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতেই এখানে আসা। না, দু’দশজনের সঙ্গে নয়। বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, ঈদে প্রিয়জনকে উপহার দিতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন তারা। সত্যি সুন্দর এমন দেয়া-নেয়া। সৌহার্দ্য বাড়ায়। পরস্পরের সঙ্গে ভালবাসা বিনিময় হয়। কিন্তু বেদনার কথা এই যে, এমন দু’জন মানুষও খুঁজে পাওয়া গেল না যারা অচেনা গরিব, হতদরিদ্র মানুষের কথা ভাবছেন! ঈদের মতো এতবড় উৎসবে শহর ঢাকার ছিন্নমূল ছেলেমেয়েরা শপিংমলের সামনে এটা-ওটা বিক্রি করছে। গায়ে মলিন পোশাক। এখানে ওখানে সেলাই করা। তাদের চোখের সামনে দিয়ে ব্যাগভর্তি জামা-কাপড় নিয়ে কত মানুষ যে চলে যাচ্ছে! ভাগ্যবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তারা ফিরেও তাকাচ্ছেন না। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডে ইনফিনিটির শোরুমের সামনে কাঁচা সুগন্ধী বেলি ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আসমা নামের একটি মেয়ে। তার মালা কেউ কিনছে না। সে তবু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে মাগরিবের আজান। কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হলো তাকে। কাছে এগিয়ে যেতেই বলল, মালা নেন। নেবেন? তার কাছ থেকে মালা কিনতে কিনতে এই কথা। সেই কথা। না, প্রথমে সে মুখ খুলবে না। লজ্জা পাচ্ছিল। পরে স্বীকার করে বলল, ‘ইফতারির গন্ধ ভাল লাগে আমার। রাস্তায় অনেক দোকান তো। দেখি। কিন্তু পয়সা নাই। তয় কয়েকজন মিইল্যা পেঁয়াজি, বেগুনি খাই। কিন্না খাই। ঈদে নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, আমার দুটা জামা আছে। ভালই। ভাইয়ের জন্য লাগব। কথা শেষ করার আগেই ফুলের মালা বিক্রি করার জন্য ছুট দেয় সে। হয়ত, এই মালা বিক্রির আপ্রাণ চেষ্টা ছোট ভাইয়ের শার্ট কেনার জন্যই! এদিকে, ঈদের কেনাকাটার মাঝেই চলছে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। সারা বছর শহর ঢাকায় থাকলেও, ঈদে লাখ লাখ মানুষ গ্রামে চলে যান। পৈত্রিক ভিটায় পরিজনের সঙ্গে ঈদ করেন। এবারও বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাবেন। এখন চলছে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। আর বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিল গত শুক্রবার থেকে। এখনও চলছে। এছাড়া নদীপথে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাবেন। আকাশপথে টিকেটের দাম স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক চড়া। এর পরও টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের প্রভাবে বদলে যাবে আরও অনেক কিছু। কিন্তু মন কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলাবে আমাদের? কবে আমরা সবার ঈদ নিয়ে ভাবব?
×