ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপনার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না ॥ হাইকোর্ট

৫২ পণ্য না সরানোয় নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যানকে তলব

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৪ মে ২০১৯

 ৫২ পণ্য না সরানোয়  নিরাপদ খাদ্যের  চেয়ারম্যানকে তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদেশের পরও ৫২ মানহীন পণ্যের একটিও বাজার থেকে না সরানোয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে অপসারণে জারি করা রুল শুনানির প্রথম দিনে আদালত এই আদেশ দেয়। আগামী ১৬ জুন তাকে আদালতে হাজির হয়ে আদেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে । একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এদিকে ৪০৬ পণ্য থেকে তিনশ’ তেরোটির পরীক্ষার ফল প্রকাশ করলেও অপ্রকাশিত ৯৩ পণ্যের ফল প্রকাশ করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। নিম্নমানের ৫২ পণ্যের মধ্যে যদি কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বাজারজাত করতে চায় তাহলে বিএসটিআই থেকে পুনরায় মান পরীক্ষা করাতে হবে। মান পরীক্ষার পর বিএসটিআই অনুমতি দিলে তা বাজারজাত করা যাবে। এমন নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। শুনানিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের জনবল সঙ্কটের কথা জানালে আদালত বলে, আপনাদের জনবল কত? তিনি জানান, ১৭। তখন আদালত বলে, ১৭ জন মিলেও একটা মসলার প্যাকেট অপসারণ করতে পারলেন না? আপনারা কি বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভয় পাচ্ছেন? ভয় পেলে ওই চেয়ারে বসার দরকার কি। বাসায় গিয়ে রান্নার কাজ করুন, আর তা না হলে ব্যাংকে গিয়ে কেরানির কাজ করুন, বসে বসে টাকা গুনবেন। আদালতের আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকরা অক্ষরে অক্ষরে লিখেছেন, তারপরও বলবেন আদেশ পাননি। আপনারা কি বাংলা, ইংরেজী পড়তে পারেন না? এত দিনেও একটি পণ্যও আপনারা অপসারণ করতে পারলেন না- কী করেছেন আপনারা? আপনারা কি হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? এ সময় আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে কামরুজ্জামান কচি, প্রাণ এগ্রোর পক্ষে এম কে রহমান, এসিআইর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সান চিপসের পক্ষে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, বাঘাবাড়ী ঘির পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ও বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন সরকার এম আর হাসান। পরে আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রুল ও আদেশ ছিল, বৃহস্পতিবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ তাদের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। এর মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেখে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছে। কারণ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে ৫২ পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা ও জব্দ বিষয়ে দালিলিক কোন কাগজপত্র তারা দাখিল করতে পারেনি। এ কারণে আদালত তাদের কঠোর সমালোচনা করেছে। দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে তাদের সতর্ক করেছে। আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলেছে। ১৬ জুন তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। এদিকে কাশেম ফুড প্রোডাক্টের সান চিপসের পক্ষে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, সান চিপসের ছয়টি ফ্লেবার রয়েছে। এর মধ্যে শুধু টমেটো ট্যাঙ্গো ছাড়া অন্য পাঁচটি ফ্লেবারের চিপস বাজারজাত করতে পারবে। আদালতে আবেদনে বলা হয়েছে সান চিপস বাজার থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সান চিপসের সব ফ্লেবারের চিপসের ওপর নিষেধাজ্ঞা মনে করছে। এরপর আদালত বলেছে শুধু টমেটো ট্যাঙ্গো চিপস ছাড়া অন্য ফ্লেবারের চিপস বাজারজাত করতে পারবে। সান টমেটো ট্যাঙ্গোটাও করতে পারবে, তবে নতুন করে পরীক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় মান ভাল আসতে হবে। কাশেম ফুড প্রোডাক্টের পরিচালক মাহাবুবুল আলম বলেছেন, সান টমেটো ট্যাঙ্গো ছাড়া অন্য ফ্লেবারের চিপস বাজারজাত করতে আদেশ দিয়েছে আদালত। আমাদের আবেদন গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। আদালতে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিটেস্ট অলরেডি বিএসটিআই শুরু করেছে। তবে ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ যদি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পুনরায় টেস্ট করাতে চায় তাহলে ১৩ জুনের মধ্যে তাদের পণ্য টেস্ট করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১২ মে শিহাব উদ্দিন খান বলেছিলেন, আদালত সেই ৫২ সাব-স্ট্যান্ডার্ড পণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আইন অনুসারে ব্যবস্থা (জব্দ বা ধ্বংস) নিতে বলছে। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়। দুই বিবাদী এ বিষয়ে ২৩ মে আদালত আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছে। এছাড়া আদালত রুল জারি করেছে। গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির’ (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন। এর আগে তারা ওইসব পণ্য প্রত্যাহার ও জব্দ করার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে দুই সচিবসহ ৫ জনের প্রতি আইনী নোটিস পাঠায়। বিএসটিআই পরীক্ষায় ওসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য ধরা পড়ে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ৬ মে ওই আইনী নোটিস পাঠানো হয়। বিএসটিআই-এর বরাত দিয়ে ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে নোটিসে বলা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল। বিএসটিআই ওই ৫২ প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করে। নোটিসে বলা হয়, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি কিডনি ও লিভারে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্যসমূহ জব্দ না করে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ওসব নিম্নমানের পণ্য বাজারে বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে রয়েছে সরিষার তেল- সিটি অয়েল মিলের তীর, গ্রীন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানির জিবি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, শবনম ভেজিটেবল অয়েলের পুষ্টি ব্র্যান্ডগুলো। লবণের মধ্যে রয়েছে- এসিআই, মোল্লাবো সল্ট, মধুমতি, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশাল। মসলার মধ্যে রয়েছে- ড্যানিশ, ফ্রেশ, বাঘাবাড়ী স্পেশাল, প্রাণ ও সান এর গুঁড়া হলুদ, এসিআই ফুডের পিওর ব্র্যান্ডের গুঁড়া ধনিয়া। লাচ্ছা সেমাইর মধ্যে মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েলফুড, বাঘাবাড়ী স্পেশাল, প্রাণ, জেদ্দা, কিরণ ও অমৃত ব্র্যান্ডগুলো। নুডলসের মধ্যে রয়েছে- নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলি নুডলস। কাশেম ফুড প্রোডাক্টের ‘সান’ ব্র্যান্ডের চিপস।
×