ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৪ মে ২০১৯

 মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রমজানুল মুবারাকের আজ ১৮তম দিবস। ক্রমেই শেষ হতে চলেছে মাগফিরাতের মধ্যম দশক। শহরের মানুষ স্বপ্ন আঁকছে গ্রামের সবুজ জমিনে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দে শামিল হওয়ার। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ ধরনের যাতায়াতে ইসলামি শরীয়তের কিছু নিয়ম-কানুন আলাদাভাবে সাজানো আছে। এগুলো কিন্তু একজন মুসলমানের জন্য অলঙ্ঘনীয়। তার মধ্যে একটি হলো কসরের নামাজ। আজ সফরে বা কোথাও ভ্রমণ করার সময় নামাজ আদায়ের কিছু নিয়ম আমরা আলোচনা করব। আল্লাহতা’য়ালা মানুষের জন্য সহজ জীবন প্রবর্তন করেছেন। কিন্তু না জানার কারণে মানুষ নিজেই নিজের জীবনকে কঠিন করে তোলে। কোন প্রয়োজনের তাগিদে দূর-দূরান্তে সফর করা একটি কষ্টকর অভিজ্ঞতা। এ সময়ও তো খোদায়ী বিধিবিধান মানতে হবে। কিন্তু এজন্য ইসলাম সহজতর ইবাদতের কর্মসূচী প্রণয়ন করেছে। সফরকালীন নামাজের সংক্ষিপ্ত রূপ ও নির্দেশনা রয়েছে, যাকে বলা হয় সালাতুল ক্বসর বা ক্বসর নামাজ। কোরানুল কারীমের শূরা নিসার ১০১নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহুতা’য়ালা ক্বসর নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ মানা ফরজ। কিন্তু একশ্রেণীর মুসল্লি মনে করেন-কোরানে ভ্রমণকালীন নামাজের ক্বসর বা সংক্ষেপে আদায় করার কথা বলা হয়েছে তো কি হয়েছে? আমরা অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের ন্যায় পরিমাণে বেশি পড়লে তো আর দোষ নেই। আসলে এমন ধারণা ভুল ও গোমরাহি। আরেক শ্রেণীর মুসল্লি ক্বসর নামাজের নিয়ম জানে না বলে এটি ত্যাগ করে। শরিয়ত মতে এটি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা এক মারাত্মক গুনাহ ও অপরাধ। উল্লেখ্য, এক মঞ্জিল অথবা দুই মঞ্জিলের সফর যদি কেউ করে; তবে তাতে শরিয়তের কোন হুকুম পরিবর্তন হয় না। শরিয়ত অনুযায়ী তাকে মুসাফিরও বলা হয় না। সমস্ত পালনীয় বিধান তার জন্য হুবহু ঐরূপই থাকবে যেইরূপ বাড়িতে থাকে। যেমন : চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে। যে ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মঞ্জিল স্থানে যাবার নিয়ত করে বের হবে এবং অনুর্ধ ১৫দিন থাকার নিয়ত করবে তাকে শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির বলা হবে। যখন সে নিজ শহরের লোকালয় অতিক্রম করবে তখন তার ওপর মুসাফিরের হুকুম বর্তাবে। এখন প্রশ্ন হলো, তিন মঞ্জিল কি? চলতে পথে খাওয়াদাওয়া, পাকসাফ, আরামÑবিশ্রামের সময় বাদ দিয়ে স্বাভাবিকভাব হেঁটে, নৌকায় বসে কিংবা উটের পিঠে চড়ে তিনদিনে যতদূর পৌঁছা যায় তাকে তিন মঞ্জিল বলে। আরবদেশে প্রায় মঞ্জিল নির্ধারিত থাকে। আমাদের দেশে মোটামুটি হিসেবে এর দূরত্ব ৪৮ মাইল। এ নির্দিষ্ট দূরত্ব কোন দ্রুতযানের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে অতিক্রম করলেও মুসাফিরের বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমন মোটর কিংবা উড়োজাহাজে চড়ে। যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির সে জোহর, আসর ও এশার ফরজ নামাজ দুই দুই রাকাত পড়বে এবং সুন্নত নামাজের হুকুম এই যে, যদি ব্যস্ততা থাকে তবে ফরজের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত ছেড়ে দেয়া দুরস্ত আছে। এতে কোন গুনাহ হবে না। আর যদি ব্যস্ততা না থাকে তবে সুন্নতগুলোও ছাড়বে না। সফর অবস্থায় সুন্নত পড়লে তা পুরোপুরিই পড়তে হবে। সুন্নতের ক্বসর হয় না। আর ফজর, মাগরিব ও বিতরের নামাজে ক্বসর নেই। একইভাবে জোহর, আসর এবং এশা এই তিন ওয়াক্তের নামাজ সফরের হালতে ইচ্ছা করে চার রাকাত পড়লে গুনাহ হবে। যদি কেউ বাড়ি হতে তিন মঞ্জিল অপেক্ষা বেশি দূরে যাওয়ার নিয়ত করে বের হয়, কিন্তু পথিমধ্যে ঘটনাক্রমে কোন স্থানে ২/৪ দিন থাকার দরকার হয়ে পড়ে তারপর প্রায় প্রতিদিনই খেয়াল করে যে, কালপরশু চলে যাবে, কিন্তু যাওয়া হয় না। এরূপ করে যদি বহুকালও ঐ স্থানে থাকা হয় এবং কোন সময়ই অনুর্ধ ১৫দিন থাকা না হয় তবে যতদিন ঐ স্থানে থাকবে ততদিন মুসাফিরই থাকবে, মুক্কীম হবে না। তাকে মুসাফিরের নিয়ম মানতে হবে। যদি কারো মুসাফিরী হালতে নামাজ কাযা হয় ও সেই নামাজ মুক্কিমী হালতে কাযা পড়তে চায় অর্থাৎ বাড়িতে ফিরে আদায় করতে চায় তবে জোহর, আসর এবং এশার দু’রাকাত করেই কাযা পড়বে। এরূপ মুক্কিমী হালতে যদি নামাজ কাযা হয়ে থাকে এবং সে নামাজ মুসাফিরী হালতে আদায় করতে চায় তবে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে, দুই রাকাত পড়বে না। মুক্কিম বা স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য মুসাফির ইমামের পেছনে ইক্তেদা করা জায়েজ আছে। তবে মুসাফির ইমাম ( চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে) যখন ২ রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে অর্থাৎ উভয়দিকে সালাম ফিরিয়ে সারবে তখন মুক্কিম মুক্তাদিগণ আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়াবে এবং অবশিষ্ট দুই রাকাত নিজে নিজে পড়ে নেবে। অবশ্য সালামের সঙ্গে সঙ্গে ইমামের বলে দেয়া উচিত তিনি মুসাফির। সকল মুক্তাদি যেন বাকি নামাজ নিজগুণে আদায় করে নেন। তবে জামাতের আগেই কথাটি বলে রাখা উত্তম। একইভাবে কোন স্থানীয় ইমামের পেছনে মুসাফির ইক্তেদা করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে তাকে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে আরও কিছু মাসলাÑমাসায়িল রয়েছে। এসব হুকুম আহকাম জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের নামাজকালাম আল্লাহর দরবারে আরও গ্রহণীয় করে তুলতে পারি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দিন। আমিন।
×