ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওদের ধরতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পাঁচ শতাধিক বেপরোয়া ছিনতাইকারী দাবড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৪ মে ২০১৯

 পাঁচ শতাধিক বেপরোয়া ছিনতাইকারী দাবড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা

শংকর কুমার দে ॥ ঈদ সামনে রেখে রোজার মাসে বেপরোয়া হয়ে ওঠা সশস্ত্র ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় ৩ শতাধিক স্পটে দাবড়ে বেড়াচ্ছে অর্ধ শতাধিক ছিনতাই চক্রের ৫ শতাধিক সদস্য। রোজার মাসে ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন ও নিষ্কণ্ঠক করতে ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, যেসব স্থান স্পর্শকাতর ও ছিনতাই স্পট এবং যেসব স্পটে হরহামেশাই ছিনতাইর ঘটনা ঘটে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, মালিবাগের এসবি অফিসের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ১ নম্বর গেট থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের আগে পীরজঙ্গী মাজার, শান্তিনগর মোড় থেকে ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেট, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গুলশান শ্যূটিং কাব, মহাখালী কাঁচাবাজার, পান্থপথ মোড় থেকে ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে জনপথ মোড় হয়ে ধলপুর সিটি, মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ, মৌচাক থেকে মগবাজার মোড়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া, বাবুবাজার ও হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো স্পটে দিনদুপুরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাই চক্রের সদস্যরা অধিকাংশই তরুণ। এদের মধ্যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াও রয়েছে। নেশার টাকা যোগাড় করতে এসব তরুণ অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে। তবে ঢাকায় যেসব ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে তার বেশিরভাগই ভাসমান, তাদের নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। ডিএমপি সূত্র মতে, প্রতি বছর রোজা এলেই রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে যায়। কোটি কোটি টাকা ছিনতাই হয়। প্রতি বছর ছিনতাইকারীদের হাতে খুন, আহতসহ নানা অঘটন ঘটে। ছিনতাইকারী চক্রের হাতে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফেরেন পথচারী, কেনাকাটা করতে আসা লোকজন। তবে এবার রোজার শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপর থাকায় ঢাকায় বড় ধরনের কোন ছিনতাই বা ছিনতাইকারীদের হাতে হতাহতের ঘটনা ঘটতে দেয়া হয়নি। ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারী চক্রের হাত থেকে মানুষজনকে রক্ষার জন্য ডিএমপি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীরা একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করে। ফলে তাদের ধরতে অনেকটাই বেগ পেতে হয়। অধিকাংশ ছিনতাইকারী মোটরবাইকে আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতি বহন করে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে প্রথম চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এতে কাজ না হলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়, বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের প্রায়ই টার্গেট করছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাইকারীদের একটি অংশ এখন ছিনতাইকালে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে, পুলিশ পরিচয়ে দেহ তল্লাশির নামে যাত্রীদের রিক্সা বা গাড়ি থেকে নামায়। এসব ছিনতাইকারী চক্র মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার ব্যবহার করে ছোট ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের ছিনতাই করে বেড়ায়। ঈদ সামনে হঠাৎ করেই ছিনতাইকারী চক্র হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রোজার আগের মাসে যেসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, তার একটি ছিনতাইয়ে কোন টাকা উদ্ধার হয়নি। তবে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ ধরা পড়েছে। এমনকি ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় অংকের টাকা ছিনতাই কিংবা ছিনতাইকারীদের হাতে খুন বা জখম হলে থানা পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশের পর ঘটনা জানাজানি হয়। কিন্তু সামান্য টাকা ছিনতাই হলে বা প্রাথমিক চিকিৎসায় আরোগ্য লাভের ঘটনা ঘটলে সেসব ঘটনা থানা পুলিশ, হাসপাতাল, সংবাদ মাধ্যমে আসে না। আবার বেশিরভাগ সময়ই ছিনতাইর শিকার যারা হন তারা থানা পুলিশের বাড়তি ঝামেলা এড়ানোর জন্য তাদের শরণাপন্ন হন না। থানা পুলিশও তাদের এলাকায় অপরাধ কম হয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তা দেখানোর জন্য অনেক সময় ছিনতাইসহ অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করতে অনুৎসাহিত করেন। এ কারনে থানা পুলিশের পরিসংখ্যানে কোনদিনই প্রকৃত ছিনতাইর ঘটনার পরিসংখ্যানের চিত্র উঠে আসে না। এবার রমজান মাসের শুরুতেই ছিনতাই চক্রসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পথচারীরা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষজন সন্তুষ্ট দাবি পুলিশের। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রমজান ও ঈদ কেন্দ্র করে নগরজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। রমজানের ১৬ দিনে কোন উল্লেখযোগ্য অপরাধের ঘটনা ঘটেনি। বুধবার পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে চুরি নেই, ছিনতাই নেই, ডাকাতি নেই। ছিনতাই পার্টি, মলম পার্টি, মাইক্রো পার্টি কোনটাই নেই। ঈদ উপলক্ষে ঢাকাবাসী কেনাকাটা করে নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরছেন। গভীর রাত পর্যন্ত লোকজন কেনাকাটা করছেন। মার্কেট শপিংমলে যেমন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে, তেমনি সড়কেও টহল পুলিশ কাজ করছে। গোয়েন্দারা সাদা পোশাকে নজরদারি করছে। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মানুষ ঈদে নির্বিঘ্নে শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
×