ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ইজিপিপি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৪ মে ২০১৯

 যশোরে ইজিপিপি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি) প্রকল্পে কার্যক্রম বাস্তবায়নে যশোরে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়ে থাকে। নির্মাণ করা সড়ক টেকসই করার জন্য কালভার্ট, ক্রস ড্রেন ও প্যালাসাইডিং করা হয় এবং বিদ্যালয়ের টয়লেট নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে দুই পর্যায়ে ৪০ দিন করে ৮০ কর্মদিবসের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, যশোরের ৮টি উপজেলায় ইজিপিপি প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ১৮ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া নন-ওয়েজ কস্ট বাবদ ৯৬ লাখ ২১ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সরদার মজুরি বাবদ ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থের ৩০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের এবং ৭০ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের। বরাদ্দকৃত অর্থে গতবছরের বন্যা এবং চলতি বছরের বন্যা পরবর্তী রাস্তাঘাট মেরামত ও উঁচুকরণের নিমিত্তে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিকদের মজুরি স্ব স্ব ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়ার কথা দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য প্রত্যেক শ্রমিককে ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। প্রতি সপ্তাহের শনি থেকে বুধবার কাজ করার পর বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা মজুরি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। শ্রমিকরা প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা হারে মজুরি পান। প্রত্যেক প্রকল্পের এক-একটি পর্যায় ৪০ কার্য দিবসের মধ্যে শেষ করতে হয়। প্রকল্পস্থলে সাইনবোর্ড স্থাপন করে নারী ও পুরুষ শ্রমিক সংখ্যা উল্লেখ করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ তারপরও থেমে নেই অনিয়ম। সূত্র জানায়, প্রকল্পের বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ‘বিশেষ চুক্তির’ বিনিময়ে শ্রমিকের নামে ব্যাংকে জমা হওয়া অর্থ ভাগাভাগি করে নেন। সূত্রমতে, বর্তমানে অনেক শ্রমিক ভিন্ন পেশায় প্রতিদিন ২০০ টাকার অনেক বেশি আয় করে থাকেন। এজন্য তাদের ২০০ টাকা মজুরিতে পোষায় না। আবার ভাগাভাগির সুযোগ নিয়ে ‘মওকা’ হাতছাড়া করতে চান না অনেকে। এতে শ্রমিক-জনপ্রতিনিধি উভয়েই ‘লাভবান’ হন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজে মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে কোন কোন উপজেলায় কাজের মান ও শ্রমিক উপস্থিতি সন্তোষজনক দেখতে পান। কিন্তু কোন কোন উপজেলায় প্রকল্পে উল্লেখিত শ্রমিকের চেয়ে কম দেখতে পেয়েছেন। এ সময় তিনি ওইদিনের হাজিরা কেটে দেন। কিন্তু অন্যান্য দিন হাজিরা কাটার এখতিয়ার তার নেই। ঝিকরগাছার পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নওশের আলী বলেন, দফাদার ও সাধারণ মানুষ তদারকি কাজে থাকেন। আবার যে ওয়ার্ডে কাজ হয়, সেই ওয়ার্ডের মেম্বাররাই কাজ দেখাশোনা করেন। তবুও কেন অনিয়ম হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫-১০ ভাগ মেম্বাররা না পেলে তাদের চলবে কিভাবে? সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান হিসেবে আপনারও তো প্রাপ্য রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ মেয়াদে চেয়ারম্যানগিরি করছি। আগে সাড়ে তিনশ’ টন চাল-গম পেতাম। এখন পাই ৫ টন। আমি নেব কী আর দেব কী, আপনিই বলেন? চৌগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ মোবাইলে বলেন, তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া হয়। অনুপস্থিতদের বিল আমরা কেটে দিই। কাজ শুরু হয়নি দুই উপজেলায় ॥ এদিকে অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে ইজিপিপি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুই করতে পারেনি জেলার ঝিকরগাছা ও মনিরামপুর উপজেলা। ৮০ কর্মদিবসের মধ্যে কাজ শেষ করার নিয়ম থাকলেও অর্থবছরের ক্যালেন্ডার হিসেবে এ সময় আর হাতে নেই। এতে এই দুই উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঝিকরগাছায় একলাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং মনিরামপুরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল হক এবং মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসানউল্লাহ শরিফীর মোবাইলে কল করলেও তারা কেউ রিসিভ করেননি। প্রকল্পের কাজ শুরু না করার কথা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন। তবে মনিরামপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবিএম বায়েজীদ কাজ শুরু না করার কথা অস্বীকার করে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে ঝিকরগাছার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী এই পিআইও ঝিকরগাছায় কাজ শুরু হয়নি স্বীকার করে বলেন, সেখানে ইঞ্জিনিয়ার আর অফিস সহকারীর পদ শূন্য আছে। কাজ শুরু করার দায়িত্ব তাদেরই। একইসঙ্গে তিনি মনিরামপুরে প্রতিমন্ত্রীর (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য) প্রটোকলের দায়িত্বে থাকেন বলে ঝিকরগাছায় কাজ শুরু করতে পারেননি।
×