ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমি

শতবছরের পুকুরে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৪ মে ২০১৯

শতবছরের পুকুরে  নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ায় আবাদি জমির পাশাপাশি শতবছরের পুকুর জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। নিয়ন্ত্রণহীন অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বহুতল ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় চকরিয়া জুড়ে হ্রাস পেতে চলছে আবাদি জমির পরিমাণ। পরিবেশ অধিদফতর কিংবা স্থানীয় প্রশাসন পুকুর জলাশয় ভরাট ও আবাদি জমি দখলের প্রতিযোগিতা বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্তমানে এখানে কৃষি খাত চরম হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে সম্প্রতি সময়ে চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গাস্থ চেয়ারম্যান পাড়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর মুজিবুল হক মুজিব একটিপক্ষ থেকে আংশিক অংশ ক্রয়ের পর স্থানীয় তিনশত পরিবারের মালিকানাধীন শতবছরের একটি পুকুর ভরাটের অপচেষ্টা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গাস্থ চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ওয়ালিদ মিল্টন। তিনি বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পুকুর জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বিষয়টি জেনেও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কতিপয় ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু অংশ ক্রয় করে বর্তমানে চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা তিনশত পরিবারের অংশীয় শতবছরের মুন্সি পুকুরটি ভরাট করার জন্য মেতে উঠেছে। তিনি একটি অংশ ক্রয় করলেও অপর ২৯৯টি পরিবারের অংশকে তোয়াক্কা করছেন না মোটেও। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষে আনোয়ারুল মহসিন নামে এক ব্যক্তি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দফতরে অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল দাবি করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে উপজেলা ও পৌরসভার প্রতিটি অঞ্চলে আবাদি জমি সঙ্কটের ফলে আগামীতে চাষাবাদ কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় উপজেলায় চরম খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, অপরিকল্পিত পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে যে কোন মুহূর্তে এসব স্থাপনা ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সরকার চকরিয়া উপজেলার বাণিজ্যিক শহর ও উপজেলা পরিষদসহ আশপাশ এলাকা নিয়ে পৌরসভা হিসেবে অনুমোদন দেয়। মূলত পৌরসভা ঘোষণার পর থেকে এলাকার আবাদি ও অনাবাদি জমির মূল্য বাড়তে থাকে চম্বুকগতিতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারনে একই সঙ্গে উপজেলার প্রায় ইউনিয়নের বেড়ে যায় আবাদি জমির মূল্য। সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের পর ঘূর্ণিঝড় ও ৯৫ সালের ভয়াবহ বন্যায় আতঙ্কিত জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার নিজ এলাকার জমিজমা ও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে চকরিয়া উপজেলায় এসে বসতি স্থাপন শুরু করে। স্থানীয়দের মতে, এ উপজেলায় বহিরাগত এসব জনগণের অবস্থানের কারণে দিনদিন বেড়ে যায় জমির মূল্য। জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার হিসাব মতে, ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৭ হাজার ৪৯৮ জন নাগরিক স্থায়ী বাসিন্দা বনবাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়। এ অবস্থার কারণে উপজেলায় ভবিষ্যতে কৃষি ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়বে। অভিযোগ উঠেছে, পৌর এলাকায় নক্সা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি এ নিয়ম উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্টরা জমিনের সম্ভাব্যতা যাচাই না করে নক্সা অনুমোদন করে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাময়িক লাভবান হলেও তাদের অলিখিত এ সুযোগ সুবিধার কারণে অনেকটা বাধাহীনভাবে বহিরাগতরা আবাদি জমিতেই বহুতল ভবন নির্মাণ করে চলছে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, অপরিকল্পিত নগারায়ণের বিষয়ে প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে উপজেলায় চাষাবাদের জমি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলায় সৃষ্টি হবে চরম খাদ্য ঘাটতি। কৃষি ব্যবস্থার স্বার্থে নিয়ন্ত্রণহীন এ প্রতিযোগিতা বন্ধে জনমত গড়ে তোলতে হবে। চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে আবাদি জমি কমে যাবার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ বলেন, বিষয়টি কৃষি খাতের জন্য চরম অশনি সঙ্কেত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
×