ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ খেলাপীদের বিশেষ সুবিধায় হাইকোর্টের এক মাসের স্থিতাবস্থা

প্রকাশিত: ১১:২৬, ২২ মে ২০১৯

ঋণ খেলাপীদের বিশেষ সুবিধায় হাইকোর্টের এক মাসের স্থিতাবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণখেলাপীদের ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা জারি থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী মনজিল মোরসেদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে, আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলার কার্যকর হবে না। ফলে ঋণখেলাপীরাও এই সময় পর্যন্ত ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনর্তফসিলের সুযোগটি নিতে পারবেন না। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ঋণখেলাপীদের নতুন করে সুযোগ দিতে ২ শতাংশ সুদ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনর্তফসিলের সুবিধা রেখে সার্কুলার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়টি আমরা ১৬ মে বিকেলে আদালতকে অবহিত করি। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী জানান, এ সংক্রান্ত কোন সার্কুলার দেয়া হয়নি। পরে ওই দিন (১৬ মে) বিকেলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সার্কুলারটি প্রকাশ করা হয়। পরে আমরা ওই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি। আইসিইউ-সিসিইউ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ॥ এদিকে সারাদেশের সরকারী হাসপাতালে ৩৪০ ও বেসরকারী হাসপাতালে ৫৭৩টি আইসিইউ ইউনিট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ৩৪৪টি সিসিইউ ইউনিট রয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জেলা সদরে প্রতিটি আইসিইউ বেড স্থাপনের জন্য গড়ে ৫৩ লাখ টাকা খরচ হবে এবং প্রতিটি সিসিইউ বেড স্থাপনের জন্য গড়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সারাদেশের সরকারী-বেসরকারী হাপাতালগুলোতে কতগুলো আইসিইউ, সিসিইউ ইউনিট রয়েছে তার সংখ্যা একইসঙ্গে একটি আইসিইউ-সিসিইউ ইউনিট স্থাপন করতে কী পরিমাণ টাকা, কত জনবল ও কতজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয় সে বিষয়ে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা সদরে প্রতিটি আইসিইউ বেড স্থাপনের জন্য গড়ে ৫৩ লাখ টাকা খরচ হবে এবং প্রতিটি সিসিইউ বেড স্থাপনের জন্য গড়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিচালক ডাঃ মোঃ আমিনুল হাসানের দেয়া এক প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষ। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে আইসিইউ এবং সিসিইউ’র একটি তালিকা ও দাখিল করা হয়েছে। তবে এ তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া ‘দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস এ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’ অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিনের পুরনো অর্ডিন্যান্স রহিত করে যুগোপযোগী করত : স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৯ প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে এবং যেহেতু লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের বিদ্যমান নির্দেশনার আলোকে আইন প্রণীত হওয়ার পর উক্ত আইনের আলোকে বিধিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন করা যুক্তিযুক্ত, সেহেতু দেশের বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট ল্যাবরেটরিজের কার্যক্রম মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৯ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ওই আইনের আলোকে বিধিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ সময় আদালত জানতে চান আইনটি কি অবস্থায় আছে। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, খসড়া পর্যায়ে কেবিনেটে আছে। পরে রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবেদেন সিসিইউ এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করা হয়নি। আদালত পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করতে বলেছে। অবকাশকালীন ছুটির পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। এর আগে গত ৭ মার্চ সারাদেশের সরকারী-বেসরকারী হাপাতালগুলোতে কতগুলো আইসিইউ, সিসিইউ ইউনিট রয়েছে তার সংখ্যা নিরুপণ করে তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে একটি আইসিইউ-সিসিইউ ইউনিট স্থাপন করতে কী পরিমাণ টাকা, কত জনবল ও কতজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয় সে বিষয়ে প্রতিবেদন উল্লেখ করতে বলা হয়। এ সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল বেসরকারী ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবেরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য তালিকা নির্ধারণ ও আইন অনুসারে তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরর যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত কমিটিকে ওই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই দেশের সকল বেসরকারী ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবেরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য তালিকা আইন অনুসারে প্রদর্শনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস এ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুসারে নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়নের জন্য ৬০ দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন আদালত। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এসব আদেশ দেন।
×