ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছদ্মবেশে আসামি ধরল পুলিশ

প্রকাশিত: ১১:২৪, ২২ মে ২০১৯

ছদ্মবেশে আসামি ধরল পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি। পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। কাঁধে রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত বেলচা। দেখে মনে হবে যেন রাজধানীর মহল্লায় মহল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজের সন্ধানে ঘুরছেন তিনি। আসলে তিনি মিস্ত্রি নন। তিনি রাজধানীর কদমতলী থানার এসআই মোঃ লালবুর রহমান। এসেছেন খুনের মামলার আসামি খুঁজতে। আসামি ধরার কৌশলে সফলও হয়েছেন তিনি। কদমতলীতে শারমিন আক্তার হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর তিনি এমন অভিনব ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ মার্চ রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার ধনিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পারিবারিক কলহের জেরে শারমিন আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী মাসুদ হাওলাদার। ঘটনার পরদিন শারমিনের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান কদমতলী থানার এসআই মোঃ লালবুর রহমান। দায়িত্ব পাওয়ার পর শারমিন হত্যায় অভিযুক্ত ও মামলার আসামি স্বামী মাসুদ হাওলাদারের মোবাইল ট্রাক করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পান তিনি। পরে আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে হত্যাকারীর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে নিকটাত্মীয়ের মোবাইলে তথ্য বিশ্লেষণ করে আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই লালবুর রহমান। জানতে পারেন, নিহত শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরাতন প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসার জন্য সে শনির আখড়ায় দোকানের পজিশনও নিয়েছিলেন। তবে ব্যবসা শুরুর আগেই স্ত্রী শারমিনকে হত্যা করেন স্বামী মাসুদ। পরে দোকানের পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকান মালিকের পক্ষের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে প্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিক পক্ষের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিষয় তাদের জানিয়ে সহায়তা চায় পুলিশ। সোমবার দুপুর ২টার দিকে মাসুদ দোকানের অগ্রিম টাকা নিতে গেলে মিস্ত্রি সেজে থাকা এসআই লালবুর রহমান ও এএসআই মোঃ জসিম ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। শারমিন হত্যার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লালবুর রহমান জানান, মাসুদ অনেক চতুর। তিনি আশপাশে ভাল পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত সটকে পড়ে। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ছদ্মবেশ ধারণ করা হয়। রাজমিস্ত্রির পোশাকে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করতে থাকি। দোকান মালিক পক্ষের লোকের ওপর নজর রাখে এএসআই জসিম। এসআই লালবুর জানান, অপেক্ষার একপর্যায়ে চলে আসে সেই মোক্ষম সময়। দূর থেকে একটি লোক মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দোকান মালিকপক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছে। কোন কালক্ষেপণ না করে মাসুদকে পেছন থেকে জাপটে ধরি। হঠাৎ জনসম্মুখে এমন জাপটে ধরায় স্থানীয় লোকজন জানতে চাইলে নিজেকে পুলিশের পরিচয় দিয়ে জানাই, সে হত্যা মামলার আসামি। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানান, হত্যার সময়ের চেহারা ছিল অনেক ফর্সা এবং দাড়ি-গোঁফহীন। নিজেকে গোপন রাখতে চেহারার পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে কাটান যাতে ফর্সা রং কালোতে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে বড় করেন দাড়ি-গোঁফ, যাতে পুলিশ বা অন্যকেউ চিনতে না পারে। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর মাসুদ হাওলাদার সোমবার আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
×