ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২২ মে ২০১৯

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ দেখতে না দেখতেই মাহে রমজানের ১৫টি দিবস আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি। এখন আমরা ১৬ রমজানে উপনীত, মাসটির মাঝামাঝি এবং মাগফিরাতের দশকের মাঝামাঝি। একটি ভাল ও নির্মল পরিবর্তনের দিকে সিয়াম সাধনা আমাদের ধাবিত করে। তার মধ্যে একটি হলো মসজিদমুখী জীবন। মাহে রমজান এলে আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আলোকিত হয়, আবাদ হয় মসজিদ। আমাদের মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ ও সামাজিক বিভিন্ন কাজগুলোর আঞ্জাম দিতে হবে। কারণ এত অখ- ইবাদত ও সেবার মানসিকতা বছরে অন্য সময় আসে না। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালবাসতে চায় তার উচিত আমাকে ভালবাসা এবং যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসতে চায় তার উচিত আমার সাহাবাদের ভালবাসা এবং যে ব্যক্তি আমার সাহাবাদের ভালবাসতে চায়, তার জন্য উচিত আমার কোরানকে ভালবাসা এবং যে আমার কোরানকে ভালবাসতে চায়, তার উচিত মসজিদকে ভালবাসা, কেননা মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তায়ালা তার তাযীম করার হুকুম দিয়েছেন এবং এ কাজে বরকত রেখেছেন, তার বাসিন্দারাও বরকতময়। মসজিদ এবং মসজিদের বাসিন্দাগণ আল্লাহর হিফাজতে থাকে, যতক্ষণ তারা নামাজে মশগুল হয়। আল্লাহ তাদের সমুদয় প্রয়োজনও মেটান। যতক্ষণ তারা মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহ তাদের মাল আসবাবের হেফাজত করেন (কুরতুবী, মা’আরিফুল কোরান)। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, কেউ যদি কোন জমিন মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করে দেয়, তখন ওই জমিন তারই মালিকানাধীন থাকবে, যতক্ষণ না সে জমিন রাস্তাসহ তার মালিকানা থেকে পৃথক করে দেয়, সকলের জন্য নামাজ আদায়ের ব্যাপক অনুমতি দেয়। মালিকানা থেকে পৃথক না করা পর্যন্ত তা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য মসজিদ হিসাবে গণ্য হয় না। ওয়াকফের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা একান্ত আবশ্যক। সকলের জন্য নামাজ আদায়ের অনুমতি না থাকলে প্রকৃত হস্তান্তর হয় না। তাই প্রকৃত ধর্মীয় মসজিদ বানানোর জন্য তথায় সর্বস্তরের মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যাপক অনুমতি থাকা অত্যাবশ্যক। অনুমতির পর একজনও যদি সেখানে নামাজ আদায় করে মালিকের মালিকানা অধিকার চিরতরে শেষ হয়ে যায়, প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদের মর্যাদা। (হিদায়া, ২য় খ-)। কোন মসজিদ যদি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তবে ওই মসজিদটি ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ করা জায়েজ আছে (আদাবুল মাসাজিদÑমাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)। যদি এলাকায় জনমানবশূন্য হয়ে পড়ার কারণে কোন মসজিদ অবহেলিত হয়ে পড়ে বা ক্রমেই ভঙ্গুর দশায় পৌঁছে যায়, তথাপিও ওই মসজিদ কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদই থাকবে, কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে সাব্যস্ত হবে না (শামী, বাহরুর রাইক)। নামাজের মধ্যে সিজদা ব্যতীত গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক বিষয় আছে। যেমন কিরআত, রুকু ইত্যাদি। কিন্তু ‘সিজদা’ শব্দ হতে মসজিদের নামকরণের দ্বারা সিজদার অস্বাভাবিক গুরুত্ব ও/মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ মানুষের সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন অঙ্গ মাথা মাটিতে ঠেকানোর অর্থ অন্তর হতে অহঙ্কার ও অহমিকা দূর করে আল্লাহর প্রভুত্বের সম্মুখে চরম বিনয় প্রকাশ করা, সেদিকে লক্ষ্য করেই রাসুলে কারীম (স) ইরশাদ করেছেনÑ সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রভুর সর্বাধিক সান্নিধ্যে যায়। -(মুসলিম, নাসাঈ)। মসজিদ একজন মুসলমানের মনে সর্বদা আল্লাহর সমীপে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রেরণা সৃষ্টি করে আর এ’টি প্রত্যেক মুসলমানের চরম ও পরম লক্ষ্য। হযরত মুহম্মদ (স.) কর্তৃক প্রচারিত ধর্মমতে উপাসনালয় একটি মৌলিক প্রয়োজন নয়। প্রত্যেক জায়গাই আল্লাহর নিকট সমান। আল্লাহর সম্মুখে বিনয়ী ভাব, ধর্মানুষ্ঠানমূলক প্রার্থনার মাধ্যমে যা ব্যক্ত করা হয়, যে কোন স্থানে তা প্রকাশ করা যায়। তাই মহানবী (স.) এরূপ বলেছেন যে, তাঁকে সমস্ত পৃথিবী মসজিদ রূপে প্রদান করা হয়েছে। অথচ পূর্বের নবীগণ কেবল গীর্জা ও নির্দিষ্ট উপাসনালয় ব্যতীত অন্যত্র ইবাদত করার অনুমতি পাননি। তিনি আরও বলেছেন: ‘যেখানেই সালাতের সময় হবে সেখানেই তুমি সালাত আদায় করবে এবং সেটাই একটি মসজিদ।’-মুসলিম, মসজিদ ২:১ পবিত্র মাহে রমজানে আমরা যেন ইবাদতÑবন্দেগিতে একতা ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে মসজিদকে প্রধান ও প্রিয়তম স্থান হিসেবে গ্রহণ করে নানাভাবে এর মর্যাদা বৃদ্ধিপূর্বক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতি হই।
×