ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধান-চাল নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে কিষান কিষানিদের

চাহিদা পূরণ করেও এবার ছয় জেলায় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকবে

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২২ মে ২০১৯

চাহিদা পূরণ করেও এবার ছয় জেলায় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলায় এবারের বোরো মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। এসব জেলার প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমির আবাদ থেকে এ চাল উৎপাদিত হবে। যা জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আর বিপুল পরিমাণ এ ধান-চাল নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় কাটছে এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষাণীদের। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলায় এবারের বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ধান থেকেই উৎপাদিত হবে বিপুল পরিমাণ চাল। যা থেকেই গোটা জেলার মানুষের খাবারের জোগান আসবে। এসব জেলার মধ্যে যশোরে বোরোর আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে, ঝিনাইদহে ৮৮ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে, মাগুরায় ৩৯ হাজার ৯৫০ হেক্টরে, কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৪২০ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গায় ৩৪ হাজার ৮৫ হেক্টরে ও মেহেরপুরে ২১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। এ হিসেবে ছয় জেলায় মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান ৪৩ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে ও উফশী জাতের ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আর প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমিতে এ চাষাবাদে উৎপাদন হয়েছে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল। বোরো ধান আবাদ থেকে উৎপাদিত এ চালের মোট পরিমাণ ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ১০১ মেট্রিকটন। এরমধ্যে যশোর জেলায় চাল উৎপাদন হবে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৪ মেট্রিকটন, ঝিনাইদহে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯৪ মেট্রিকটন, মাগুরায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫ মেট্রিকটন, কুষ্টিয়ায় ১ লাখ ২ হাজার ৪০৮ মেট্রিকটন, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৬ মেট্রিকটন, মেহেরপুরে ৭৪ হাজার ৪৮৪ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এরমধ্যে যশোর জেলায় ধানের সর্বোচ্চ চাষাবাদ ও চাল উৎপাদন হবে সবচেয়ে বেশি। উৎপাদিত এ চালের মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮১৮ মেট্রিকটন ও উফশী জাতের ১২ লাখ ৯০ হাজার ২৮৩ মেট্রিকটন। যা থেকে ৬টি জেলার মানুষের খাবারের যোগান হয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এদিকে যশোরের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ছয় জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকরা এ ধান ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে তারা সংশয়ে ছিলেন। কারণ সাধারণত এ সমেয়ই এ অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। আর এ ঝড় বৃষ্টিতেই কৃষকের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায়। কিন্তু এবার সে অবস্থার সৃষ্টি না হলেও ঘূর্ণিঝড় ফণী কৃষকের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল। তারপরও এতে ধানের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র যশোর জেলায় বোরো ধানের ৮৭১ হেক্টর জমিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। বাকি জেলার ধান ছিল অক্ষত। এ ক্ষতি কৃষকরা পুষিয়ে নিতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আর এ ধান-চাল নিয়েই এখন গ্রামের কৃষকের বাড়িতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণীর। ধান শুকানো, ধান মাড়াই, ধান সিদ্ধ ও ধান মিলে পাঠানো নিয়েই তাদের এ ব্যস্ততা। এ ব্যাপারে যশোরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ধান চাষে এ অঞ্চলের কৃষকরা আগের থেকে অনেক আধুনিক হয়েছে। তারা আবহাওয়া ও দুর্যোগের সব খবর রাখে। সে অনুযায়ী তারা সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এছাড়া, কৃষকরা সব সময় তাদের কাছ থেকে সব বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকে ও সে অনুয়ায়ী আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যশোরসহ ছয় জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ আবাদ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে। যা থেকে গোটা ৬ জেলার মানুষের খাবারের চাহিদা মিটেও চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। তিনি বলেন, আবাদের শেষ মুহূর্তে আমরা আশঙ্কায় ছিলাম কৃষকের কাক্সিক্ষত এ ধান গোলায় উঠবে কিনা। এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ফণী ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভাল থাকায় এতে আমাদের অঞ্চলে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। এ কারণে বোরো মৌসুমে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে। যা থেকে কৃষকসহ দেশ উপকৃত হবে। আমাদের এ বছর বাইরের দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে না।
×