ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সদরঘাট মূল টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২১ মে ২০১৯

সদরঘাট মূল টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান উচ্ছেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে হাইকোর্টের অপিল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ হল রাজধানীর সদরঘাট মূল টার্মিনাল ভবনের ২৭ দোকান। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীনের সার্বিক নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযান চালান হয়। এসময় দোকানের সাটার, ইট ও অবশিষ্ট মালামাল দুই লক্ষ টাকায় নিলাম দেওয়া হয়। তবে নিলামের সময় এবার একটি অতিরুক্ত সমাজসেবা মূলক শর্ত জুড়ে দেয় বিআইডাব্লিটিএ। এতে বলা হয় চূড়ান্ত নিলাম গ্রহিতাকে ওই দোকানগুলো থেকে যে বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট নদী বন্দরের এক নং টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে বিষ ফোঁড়ার মত গড়ে উঠেছিল ২৭টি দোকান। এই দোকানগুলো বহু বছর আগে বিআইডাব্লিটিএর অনুমোদনে নির্মান করা হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওই দোকানগুলো সদরঘাটে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রি চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টির কারন হয়ে দাড়ায়। দোকান থেকে উচ্ছিষ্ট বর্জ্য সরাসরি ফেলা হত নদীতে। দোকান মালিকদের পোষা হকার বন্দরের পল্টন, গ্যাংওয়ে ও যাত্রী ছাউনিতে অবস্থান করায় প্রায়ই সময় সৃষ্টি হত কৃত্রিম মনুষ্যযট। এতে ওই এলাকায় চুরি-ছিনতায়, পকেটমার, মলমপার্টি এমনকি জাল টাকা চালানকারী চক্রের উপদ্রব লেগেই থাকত। এছাড়া মূল পয়েন্টে দোকানগুলোর অসস্থান হওয়ায় সমস্ত যাত্রী বন্দর ছেড়ে পল্টনে অবস্থান করতে হত। এতে প্রায় সময় ছোট বড় দূর্ঘটনাও ঘটত ওই এলাকায়। সম্প্রতি নদী বন্দরের সৌন্দার্য বর্ধনের অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাড়ায় ওই দোকানগুলো। যার প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে দোকানগুলো সরিয়ে নিতে একটি নোটিশ প্রদান করে বিআইডাব্লিটিএ। দোকানের জায়গা বরাদ্ধের সময় উল্লেখ থাকে বিআইডাব্লিটিএ চায়লে নোটিশ প্রদান পূর্বক ওই জায়গা ফেরত নিতে পারবে। কিন্তু দোকান মালিক তা না মেনে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটি হাইকোর্টেও আপিল বিভাগ থেকে বিগত ১৯ তারিখে বিআইডাব্লিটিএর পক্ষে রায় প্রদান করে। এই রায়ে বলা হয় দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হোক এমনটা জানান বিআইডাব্লিটিএর কর্মকর্তরা। এ বিষয়ে বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, সদরঘাট নদী বন্দর থেকে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। এক সময় এই নদী বন্দরে এত সংখ্যাক যাত্রীচাপ ছিল না। বর্তমানে এই বিরাট সংখ্যাক যাত্রী যখন বন্দরে অবস্থান করে তখন ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। তারা এই ২৭টি দোকানের কারনে অপেক্ষামান ছাউনি থেকে সরাসরি নদী দেখতে পায় না। তাদের জাহাজ কখন ভিড়ছে কখন ছেড়ে যাচ্ছে তা দেখার জন্য তাদের পল্টনে যেতে হয়। এতে পল্টনে কৃত্রিম মনুষ্যযটের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন ধরণের যাত্রী হয়রানীর ঘটনা ঘটে। এছাড়া সদরঘাটের সমস্ত ভ্রাম্যমান হকারের মূল উৎস এই ২৭টি দোকান। বর্তমান সদরঘাট নদী বন্দরকে অত্যাধুনিকায়নের আওতায় এই দোকান ব্যাপক বাঁধা হয়ে দাড়ায়। ফলে আমারা প্রায় ৭ বছর আইনি লড়ায় করে গত ১৯ তারিখে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রায় পেয়ে দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছি। এখন আমরা ওই জায়গায় স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে বেড়া তৈরি করব। যাতে যাত্রীরা বন্দরের অপেক্ষামান ছাউনিতে বসেই তাদের গন্তব্যের জাহাজের আসা যাওয়া দেখতে পারে এবং যাত্রী হয়রানি না হয়। তিনি আরো বলেন, সদরঘাটের বন্দর, গ্যাংওয়ে, পল্টন থেকে হকার মুক্ত করা সম্ভব হলেও জাহাজের মধ্যে হকার উপদ্রব এখনও রয়েছে। একধরণের সুবিধাভোগী গোষ্টি তারা নৌকাযোগে হকারদের জাহাজে তুলে দেয়। এতে প্রধানত দুই ধরণের অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। এক জাহাজের ডেকে হাকাররা দোকানের পসরা বসায়। এতে যাত্রীদের অবস্থানের জায়গা কমে যায়। দুই এই হকার সৃষ্ট বর্জ্য এই এলাকার পরিবেশ দূষণের অন্যতম করান হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া দুই জাহাজের মাঝে ভাসমান নৌকা থেকে কেনাকাটা করার সময় প্রায় সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য আমরা ঈদ উপলক্ষে জাহাজের মালিকদের নোটিশ দিয়েছি আগামী ২৯ তারিখের পর কোন জাহাজেও হকার থাকতে পারবে না। ঈদ উপলক্ষে নির্বিঘ্নে যাত্রী চলাচলের কেমন প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদরঘাটে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। জাহাজে কোন ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে যাত্রীরা যাতে সহজে সরাসরি অভিযোগ করতে পারে এজন্য প্রতিটি জাহাজের অভ্যন্তরে আমাদের হেল্প লাইন মোবাইল নাম্বার দেওয়া থাকবে। জাহাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা মানার জন্য প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ সদস্য নিয়োগ করা থাকবে।
×