ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজমিস্ত্রী সেজে আসামি ধরলেন এসআই

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২১ মে ২০১৯

রাজমিস্ত্রী সেজে আসামি ধরলেন এসআই

অনলাইন রিপোর্টার ॥ রাজমিস্ত্রী সেজে অল্প সময়ের মধ্যে এক খুনের আসামিকে ধরে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাজধানীর কদমতলী থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি, পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। কাঁধে রাজমিস্ত্রীর কাজে ব্যবহৃত বেলচা। দেখে আপাদমস্তক রাজমিস্ত্রী মনে হলেও আদতে এটা এসআই লালবুর রহমানের আসামি ধরার গল্প। কদমতলী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মার্চ কদমতলী থানা এলাকার ধনিয়ায় একটি ভাড়া বাসার নিচতলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শারমিন আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যান ঘাতক স্বামী মাসুদ হাওলাদার। এ ঘটনায় ১৫ মার্চ নিহত শারমিনের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় কদমতলী থানার এসআই লালবুর রহমানকে। তদন্তের শুরুতে এসআই লালবুর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। তদন্তকালে জানা যায়, ভিকটিম শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরাতন প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসার জন্য তিনি শনির আখড়া দোকানের পজিশনও নিয়েছিলেন। ব্যবসা শুরুর আগেই তিনি নিজ স্ত্রীকে হত্যা করান, দোকানের পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকানের মালিকের পক্ষের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। দোকানের অগ্রিম টাকা ফেরত নিতে ডেমরা থানাধীন মিন্টু চত্বর এলাকায় আসেন মাসুদ। ইতোপূর্বে এসআই লালবুর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিকপক্ষের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাদের জানিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে বলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ মে দুপুর ২টার দিকে মাসুদ তার দোকানের অ্যাডভান্সের টাকা ফেরত নিতে মিন্টু চত্বরে আসতে চাইলে মালিকপক্ষের ওই ব্যক্তি এসআই লালবুরকে খবর দেন। খবর পাওয়া মাত্রই এসআই লালবুর ও এএসআই জসিম ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যান। এরআগে দোকানের মালিকপক্ষের লোক এসআই লালবুরকে জানায় মাসুদ অনেক চতুর লোক। সে তার আশপাশে কোনো ভালো পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত সটকে পড়েন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এসআই লালবুর রাজমিস্ত্রীর ছদ্মবেশে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করেন। একপর্যায়ে এসআই লালবুর দেখেন, দূর থেকে একটি লোকমুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দোকান মালিকপক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছে। এসময় হত্যাকারী মাসুদের পাশেই এসআই লালবুর ও এএসআই জসিম অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে কোনো কালক্ষেপণ না করে মাসুদকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন এসআই লালবুর। হঠাৎ জনসম্মুখে এমন জাপটে ধরার কারণ উপস্থিত লোকজন জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দিয়ে এসআই লালবুর বলেন, যাকে ধরা হয়েছে সে হত্যা মামলার আসামি। পুলিশের এমন কাজের জন্য স্থানীয়দের প্রসংশায় প্রশংসিত হন কদমতলী থানা পুলিশের এই চৌকস অফিসার। এ বিষয়ে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ জানান, আসামি মাসুদকে গ্রেফতারে এসআই লালবুরের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গ্রেফতার মাসুদের চেহারা ছিল অনেক ফর্সা ও দাড়ি-গোঁফহীন। খুনের পর নিজেকে গোপন রাখতে সে মুখে বড় দাড়ি-গোঁফ রেখেছিল, যাতে পুলিশ বা অন্য কেউ তাকে চিনতে না পারে।
×