ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাইগারদের বিশ্বকাপ একাদশ গঠন নিয়ে চিন্তা!

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২১ মে ২০১৯

টাইগারদের বিশ্বকাপ একাদশ গঠন নিয়ে চিন্তা!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আর মাত্র কয়েকদিন বাদেই বিশ্বকাপ। এর কয়েকদিন আগে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ দল। দলটিকে নিয়ে এবার বিশ্বকাপে কোন আলোচনা না থাকলেও, এমন অবিস্মরণীয় নৈপুণ্যে টিম টাইগাররা ক্রিকেট বোদ্ধাদের বিশ্লেষণের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অন্যতম ভীতিকর দল হিসেবেই বিবেচনা করতে শুরু করেছেন অনেকে। আর ‘টাইগার টিম’ এখন পড়ে গেছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। ত্রিদেশীয় সিরিজে যাকেই সুযোগ দেয়া হয়েছে, জ্বলজ্বলে নৈপুণ্যে ভাস্বর করেছেন নিজেকে। তাই দলের শক্তিমত্তার গভীরতা বেড়েছে তা দিব্যচোখে দেখতেই পাচ্ছেন কোচ স্টিভ রোডস। দুর্দান্ত ফর্ম প্রদর্শনের পরও অনেকে একাদশে জায়গা পাবেন না, খেলার জন্য জায়গা পেতে লড়াই করতে হবে। বিশ্বকাপে উইকেটের কন্ডিশন, ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স, অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এনেই একাদশটা গড়তে হবে। কোচ রোডস জানিয়েছেন এমনকি ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন করা ইনিংস খেলেও বাদ থাকার সম্ভাবনা মোসাদ্দেকের। অর্থাৎ সঠিক একাদশ গড়াই এখন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দলের। বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর কয়েকজনকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পেসার তাসকিন আহমেদ বাদ পড়ে যাওয়ার পর এটি নিয়ে সারাদেশেই তোলপাড় হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও ৩২ বছর বয়সী পেস অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজাকে জায়গা না দেয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তেমনি বিশ্বকাপ দলে সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারের থাকার উপযুক্ততা নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে নির্বাচকদের। সেজন্য বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের মতোই কন্ডিশন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ছিল অনেক পরীক্ষার। সেই পরীক্ষায় মূলত নজর ছিল এ কয়েকজন ক্রিকেটারের দিকেই। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে অবশ্য পরীক্ষাটা ঠিকভাবে দিতে পারেননি সাব্বির। কিন্তু সৌম্য, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক, আবু জায়েদ রাহী বেশ ভালই পরীক্ষা দিয়েছেন। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকার কারণে এদের নিয়েই ত্রিদেশীয় সিরিজে পরীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ দল। সেই পরীক্ষাটা পুরোপুরিই সফল হয়েছে। তবে একইসঙ্গে এবার দীর্ঘ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে রিজার্ভ ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করার বিষয়টি এগোতে পারেনি। কারণ পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ড পরীক্ষার জন্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বি, পেসার তাসকিন ও ফরহাদ এবং অফস্পিনার নাঈম হাসানকে শুধু দলের সঙ্গেই থাকতে হয়েছে। তাসকিন-ফরহাদ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও বাকি দুজন শুধু স্কোয়াডের সঙ্গে অনুশীলনই করতে পেরেছেন। কেউ খেলার সুযোগ পাননি মূল সিরিজে। বিশ্বকাপে এবার প্রাথমিক রাউন্ডেই সব দলের বিপক্ষে খেলতে হবে সব দলের। ১৯৯২ সালে এমন ফরমেটে খেলা হয়েছিল। এবার ১০ দল অংশ নেয়াতে প্রতিটি দলের প্রাথমিক রাউন্ডে ম্যাচ থাকবে ৯টি। বাংলাদেশ দলে ইনজুরি নিয়ে চিন্তা থাকায় অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের চিন্তা আগেভাগেই করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা সুযোগ পাননি। তবে তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি, বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১৫ জনই নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন। আর ফিটনেস সমস্যা নিয়ে যে শঙ্কা সেটিও অনেকখানি কেটে গেছে। তাই এখন বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে একাদশ সাজানো নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে টিম ম্যানেজমেন্ট। স্টিভ রোডস ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনসহ নির্বাচক, অধিনায়ক ও কোচিং স্টাফদের বেশ দ্বিধায় ফেলবে ত্রিদেশীয় সিরিজে ক্রিকেটারদের নৈপুণ্য। আর এটি রোডসের কথাতেই স্পষ্ট। তরুণ পেসার রাহীর এ সিরিজেই অভিষেক হয়েছে। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে এ সুইং বোলার ৫ উইকেট শিকার করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু ফাইনালে খেলা হয়নি সমন্বয়ের কারণে। এ বিষয়ে রোডস বলেন, আমি টিম মিটিংয়ে বলেছিলাম যে স্কোয়াডে ১৫ জন ক্রিকেটার আছে যাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। আমরা পাঁচ উইকেট শিকার করা রাহীকে অন্তর্ভুক্ত করিনি। এটি অবশ্যই তার জন্য মেনে নেয়া কঠিন। তবে ওকে না নেয়ার মানে এটাই যে স্কোয়াডে এমন কিছু খেলোয়াড় আছে যারা আসলেই অসাধারণ। সে এ ব্যাপারটি মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশ দল যে অসাধারণ হয়ে উঠেছে সেটি অনেক আগে থেকেই বোঝা গেছে। এমনকি নির্দিষ্ট কারও ওপর আস্থাশীল হওয়া কিংবা নির্ভরতা দেখানোর মতো পরিস্থিতিও এখন নেই। অপরিহার্য বলে এখন কেউ নেই। তার প্রমাণ গত বছর সেপ্টেম্বরে তামিম ও সাকিবকে ছাড়াই এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলা। এবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিব ছাড়া খেলার পরেও মোসাদ্দেকের বিধ্বংসী ব্যাটিং তার একাদশে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। কিন্তু মূল একাদশে ঢোকার জন্য লড়াই করতে হবে সবাইকে। এ বিষয়ে রোডস বলেন, আমরা একটি স্কোয়াড, শুধুমাত্র ১১ বা ১ জনের দল নই আমরা। তারা এটি বুঝতে পেরেছে যে কখনও দলে জায়গা করতে হলে উপায় বের করতে হবে কারণ অন্য আরও কিছু ভাল খেলোয়াড় এখানে খেলছে। বিশ্বকাপে থাকবে ফ্ল্যাট উইকেট। ব্যাটসম্যানদের থাকবে দৌরাত্ম্য। সেখানে সবাই ফর্মে থাকলে এবং ফিটনেস ঠিক থাকলে লিটন, মোসাদ্দেকের মতো কয়েকজনকে একাদশে নেয়া কঠিনই হবে টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য। অথচ লিটন ত্রিদেশীয় সিরিজের এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সেখানেই ৬৭ বলে ৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দিয়েছেন। মুস্তাফিজও ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বেশ ভাল বোলিং করছেন, তার বাড়তি সুবিধা ব্যাটিংয়ে পারদর্শিতা। মিরাজ নিয়মিত অফস্পিনার হলেও ব্যাটিংয়ে পারঙ্গম। সৌম্য টানা তিন হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আর কারও দিকে তাকানোর সুযোগ দিচ্ছেন না টিম ম্যানেজমেন্টকে। সবাই বেশ ফর্মে আছেন। তাই এক ম্যাচে কারও ফর্ম এবং ভেন্যুর কন্ডিশন বিবেচনায় একাদশ গঠন করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
×