ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশিত: ১০:১১, ২১ মে ২০১৯

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান  শিক্ষক নিয়োগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে না। সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হবে। সোমবার রাজধানীর প্রাইমারী টিচার্স ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) আয়োজিত ‘উদ্ভাবনী মেলা ও শোকেসিং-২০১৯’ অনুষ্ঠানে সরকারের এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের প্যারালাইসড মানসিকতা কাজ করছে। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য সরকার তাদের পদোন্নতি দিয়ে মনোবল চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এএফএম মনজুর কাদিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব ও প্রধান উদ্ভাবনী কর্মকর্তা বদরুল হাসান বাবুল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসনে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে পদোন্নতি না হওয়ায় তারা এক ধরনের অচল হয়ে পড়ছেন। তারা মনে করছেন, জীবনে তাদের আর পদোন্নতি হবে না। এ কারণে তারা হতাশার মধ্য দিন পার করছেন। কিন্তু তাদের বলতে চাই, সরকার এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা শতভাগ বাংলা পড়তে পারে না- বিশ্ব ব্যাংকের এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারে না, এটি আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা বেশ দুর্বল থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দুই-চারজন দিয়ে মনিটরিং করা সম্ভব হবে না, তবে সবাই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পাবে। এটিকে ঢালাওভাবে সাজিয়ে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যার যতটুকু দায়িত্ব ততটুকু পালন করলে প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও বেগবান করে তোলা সম্ভব হবে। সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, উদ্ভাবনী মেলার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করে সহজ ও জনবান্ধব করে শিক্ষার মান উন্নত করা। যত বেশি উদ্ভাবন হবে ততবেশি মান বৃদ্ধি পাবে। এতে করে জাতির উন্নতি ঘটবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে আনন্দঘন করে তুলতে না পারলে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়ে সচিব বলেন, প্রাথমিকের শিখন যোগ্যতাকে নিশ্চিত করা, ছাত্ররা ঠিকমতো পঠন করতে পারছে কিনা সেদিকটা উন্নত করতে পারলে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। অধিদফতরের মহাপরিচালক এএফএম মনজুর কাদির বলেন, উদ্ভাবনী কিছু করতে চাইলে উর্ধতন কর্মকর্তাসহ সবার মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু গতানুগতিক কাজ করে গেলেই হবে না, এর বাইরে শিক্ষকদের ভাবতে হবে, তাদের প্রতিষ্ঠান ও শিশুদের জন্য নতুন কি করা যায়? প্রধান উদ্ভাবনী কর্মকর্তা বদরুল হাসান বাবুল বলেন, আমাদের নানা ধরনের উদ্ভাবন নিয়ে আসতে হবে যাতে সবার কাজে আসে। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অনলাইন প্রক্রিয়ায় আনতে পারি, যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের একটি ডাটাবেজ পাওয়া সম্ভব হবে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো হচ্ছে এই উদ্ভাবনী মেলা। ১১৫টি আইডিয়া থেকে ১৫টি আইডিয়া নিয়ে এ মেলায় ১৬টি স্টলের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলায় শতভাগ দক্ষ করার উদ্যোগ ॥ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলায় শতভাগ দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে ২১ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতার আওতায় আনাসহ মোট ১৭টি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে : ২০২০ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশের সব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বাংলা পড়া, লেখা, শোনা ও বলার ওপর শতভাগ দক্ষ করে তোলা। এছাড়া উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে দেশের ২১ লাখ নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরতা দান করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মচারী এবং কমকর্তাদের সমন্বয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় সমাবেশের আয়োজন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা নানামুখী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ২০২০ সালের মধ্যে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
×