ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুরের সেই ‘বালিশ’ কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২১ মে ২০১৯

 রূপপুরের সেই ‘বালিশ’ কেলেঙ্কারির তদন্ত  রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রীনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি মুলতবি রেখেছে আদালত। সোমবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মোঃ সরওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ প্রসঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। এ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। তাই এ মুহূর্তে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। পরে রিটকারী আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন বলেন, রিটে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়েছি। এখানে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয় রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স রয়েছেন। আদালত আমাদের বক্তব্য শোনার পর এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেছেন। সেখানে তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানিয়েছেন। আদালত তখন বলেছেন, এ তদন্ত প্রতিবেদন আসুক, আমরা দেখি। সে পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি থাকুক। সম্প্রতি রূপপুরের ওই আবাসন পল্লীর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রীন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা উচ্চতার ১১টি ও ১৬ তলা উচ্চতার আটটি ভবন নির্মিত হচ্ছে। এরই মধ্যে আটটি ২০ তলা ও একটি ১৬ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য একেকটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা, আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা, রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাটের দাম দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা, ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। একইভাবে টেলিভিশন, ওয়ারড্রোব, বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে ‘অস্বাভাবিক’ খরচ দেখানো হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা ॥ ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্যাকেজসমূহের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০.০০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদফতর হতে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার পেমেন্ট বন্ধ রাখার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
×