ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর ও ভ্যাট বাড়বে না ॥ ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার খসড়া বাজেট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২১ মে ২০১৯

কর ও ভ্যাট বাড়বে না ॥ ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার খসড়া বাজেট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ

এম শাহজাহান ॥ আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার খসড়া বাজেট প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনতুষ্টির এই বাজেটে নতুন করে কর ও ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে না। তবে টিআইএন ধারী আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান এরকম এক কোটি মানুষকে করের আওতায় আনার পদক্ষেপ থাকছে। ভ্যাট আইন-২০১২ নতুন অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করবে সরকার। ১৩ লাখ বাড়িয়ে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৮৭ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। এবারের বাজেটে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচী বাস্তবায়নে। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারী-বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। আসন্ন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী ১৩ জুন বৃহস্পতিবার মহান জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাজেটেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবছর বাড়ছে বাজেটের আকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২১ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বাজেটে। ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী এক শ’ বছরে কোনদিকে যাবে বাংলাদেশ সেজন্য করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠান শেষে বলেন, উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন মাথায় রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন ২০৪১ সাল। ওই সময়ের মধ্যে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সারিতে যাতে বাংলাদেশ যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। জানা গেছে, বাজেটের সব ধরনের কার্যক্রম শেষ করে আনা হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খসড়া বাজেট তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ দিকনির্দেশনা নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে এবার মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এছাড়া এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। চলতি বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যেই বাজেটের ঘাটতি রাখা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগও এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাজেট উপস্থাপনা করা হয়েছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন আসার পর বাজেট ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। আগামী ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী মহান সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। আমার গ্রাম আমার শহর ॥ নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এবারের বাজেটে আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। এছাড়া নতুন বাজেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। দেশের প্রতিটা গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার ঘোষণা থাকছে। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে গ্রামকে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুত, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত ঘোষণা থাকবে বাজেটে। তবে আমার গ্রাম আমার শহর এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব থাকবে স্থানী সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের। তবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় চাকরি ॥ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসন্ন বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করা হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় প্রতি পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সামাজিক সুরক্ষা খাত অগ্রাধিকার পাবে। নতুন করে ১৩ লাখ দরিদ্র মানুষকে এই সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হবে। বর্তমান বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সাড়ে ৭৩ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাতা পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী, এবারের বাজেটে যোগ্য সব প্রতিবন্ধীকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের মাসিক ভাতা ও পরিবারের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তির টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের ভাতার আওতা থেকে ক্রমান্বয়ে বের করে আনতে হবে। এ জন্য আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়বে ॥ এবারের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হবে। বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা নগদ দশ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান। ২০১৯-২০ বাজেটে তাদের শুধু ভাতা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের মাসিক ভাতা আরও দুই হাজার টাকা বাড়ছে। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে দুই ঈদে সমপরিমাণ দুটি বোনাস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ভাতা ও বৈশাখী ভাতা ভোগ করছেন। এসব সুবিধা আগের মতোই অব্যাহত রাখা হবে। গরিব রোগীদের নগদ সহায়তা বাড়বে ॥ বাজেটে গরিব রোগীদের জন্য নগদ সহায়তা বাড়ানো হবে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত গরিব রোগীদের এককালীন নগদ সহায়তা দেয় সরকার। এর পরিমাণ রোগীপ্রতি ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে ১৫ হাজার রোগী আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। আসন্ন বাজেটে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এছাড়া বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং তাদের ছেলেমেয়েরা মাসিক ভাতাসহ নানা সুবিধা পাচ্ছে। বর্তমানে ৬৪ হাজার এই সুবিধা ভোগ করছে। নতুন বাজেটে এই সংখ্যা ৮১ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়বে ॥ আগামী বাজেটে কর ও ভ্যাট আদায়ের আওতা বাড়বে। বর্তমান চার কোটি টিআইএন ধারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ কর প্রদানে সক্ষম। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। এ কারণে নতুন করে এক কোটি মানুষকে করের আওতায় আনা হবে। তবে কর ও ভ্যাট হার বাড়বে না।
×