ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ ঈদ যাত্রায় দুই সংগঠনের ৩২ সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২০ মে ২০১৯

নিরাপদ ঈদ যাত্রায় দুই সংগঠনের ৩২ সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে করতে ৩২ দফা সুপারিশ দিয়েছে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা দুই সংগঠন। এর মধ্যে ২০ দফা দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ১২দফা সুপারিশ দিয়েছে নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। সোমবার পৃথক পৃথক ভাবে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপারিশ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। যাত্রী কল্যাণের ২০ দফা ॥ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০ দফা সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যামে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, প্রতিবছর ঈদ আনন্দযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় বহুলোকের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটিয়ে সড়ককে নিরাপদ করার জন্য দীর্ঘগতি ও দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালুর দাবি জানাচ্ছি। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে রেশনিং পদ্ধতিতে ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা গেলে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাত্রা নিশ্চিত করা সক্ষম হবে মনে করে সংগঠনটি। এই জন্য সংগঠনর পক্ষ থেকে ২০ দফা প্রস্তাব অনুসরণের দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড় কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা। মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা, গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা, টোল প্লাজার সবকটি বুথ চালু করা ও দ্রুত গাড়ি পাসিংয়ের ব্যবস্থা করা, মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী হাটবাজার উচ্ছেদ করা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার ও উল্টোপথের গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, মহাসড়ক অবৈধ দখল ও পার্কিংমুক্ত করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ, অযান্ত্রিক যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রীবহন নিষিদ্ধ করা, ঈদের আগে ও পরে সড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক ঈদযাত্রায় নিষিদ্ধ করা, বিরতিহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুটপাত, জেব্রাক্রসিং, পদচারী সেতু, আন্ডারপাস, ওভারপাস দখলমুক্ত করে যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা, ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, নগরীর প্রবেশমুখ ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনসমূহে দ্রুত গাড়ি পাসিংয়ের ব্যবস্থা করা, যাত্রা বিরতিকালে খাবার হোটেলে যাত্রীসাধারণ যাতে মানসম্পন্ন সাশ্রয়ীমূল্যে সেহেরি ও ইফতারি গ্রহণ করতে পারে এর ব্যবস্থা করা, দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন দ্রুত উদ্ধার আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা, অপ্রত্যাশিত যানজটের কবলে আটকে পড়া যাত্রীদের টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা রাখা, ইফতারির সুবিধার্থে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা, জাতীয় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন, মিডিয়ান গ্যাপ ও বাঁকে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা রাখা ও সড়কে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ঈদের ছুটি বাতিল করা। সড়কে নিরাপত্তায় জাতীয় কমিটির ১২ দফা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়কপথে ঘরমুখি মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের লক্ষ্যে ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে এই সুপারিশ উত্থাপন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদ-যাতায়াত পরিস্থিতির আলোকে সুপারিশগুলো তৈরি করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। সুপারিশসমূহ হলো : দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশে রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিটবিহীন সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ, বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সকল টার্মিনাল ও মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বাসের ছাদে, ট্রাক ও পিক-আপ ভ্যানে যাত্রী পরিবহন বন্ধে জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, সারা দেশে একযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সকল জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে সম্পৃক্তকরণ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, দূরপাল্লার সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল ও বেআইনিভাবে ওভারটেকিং বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, জাল লাইসেন্সধারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের গাড়ি চালানো ও চলন্ত অবস্থায় চালকদের মুঠোফোন ব্যবহার বন্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমতা প্রদান, জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের অন্য জেলাগুলোর নির্বিঘ্নে সড়ক যোগাযোগের জন্য শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নিরবিচ্ছিন্ন ফেরি ও লঞ্চ চলাচল নিশ্চিতকরণ, ঈদের আগে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া এবং ঈদের পরে কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সাতদিন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতা পরিচালনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুঃসহ যানজট রোধে সড়ক-সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ ও ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, সকল আন্ত:জেলা রুটের নৈশবাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা সংরক্ষণ। বিবৃতিতে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, দূরপাল্লার সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ ও সংস্কার কাজ চলমান থাকায় তীব্র যানজটের আশংকা রয়েছে। এবার ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে ঈদ উদযাপিত হওয়ায় সড়কও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া সারা বছর যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক তো রয়েছেই। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশগুলো তৈরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। জাতীয় কমিটির নেতারা জননিরাপত্তার স্বার্থে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই ১২ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
×