ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাসায় বাংলাদেশের ছয় তরুণ ॥ হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ২১ মে ২০১৯

নাসায় বাংলাদেশের ছয় তরুণ ॥ হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ

ডিপ্রজন্ম : আপনাদের দলটি কীভাবে তৈরি হয়? ঠিক কী ধরনের স্বপ্ন তাড়া করতে গিয়ে আপনাদের শুরু? পেছনের গল্প শুনতে চাই ঊঢঈঊখজ৮ : আমাদের দলের প্রতিটি সদস্যই কোন না কোনভাবে রোবোটিক্স অথবা বিভিন্ন প্রজেক্ট নির্ভর প্রতিযোগিতার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই জড়িত। মজার বিষয় হচ্ছে ২০১৭ সালের আগে আমরা কেউই কারও সঙ্গে কোন কাজ করিনি। আইমান সর্ব প্রথম আমার (তানজিল) কাছে এসে একটা দল তৈরির কথা বলে। শুরুটা ওখান থেকেই। ওই দলটা আসলে ছিল ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের জন্য। দলের সদস্য বাড়ানোর জন্য আমরা অন্য সদস্য খুঁজতে থাকি। ওই সময়ই তৌহিদকে আমরা আমাদের দলে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু তৌহিদ এবং জামি (প্রাক্তন সদস্য) আমাদের নাসা হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ ২০১৮-এর কথা বলে। তখন আমরা অন্য প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হওয়া শুরু করি। সেই থেকে আস্তে আস্তে আমাদের এই দলটি গড়ে উঠে। নাম দেয়া হয় ‘NSU EXCELR8’। আমরা নাসা হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় ২০১৮ এবং ২০১৯ পরপর ২ বছর অংশগ্রহণ করি। আমাদের দলের বর্তমান সদস্য ৬ জন। আমি (তানজিল), তৌহিদ এবং আইমান ছাড়া বাকি সদস্য হচ্ছে শামুন, রিদওয়ান এবং প্রজ্ঞা এবং এরা প্রত্যেকেই কোন না কোন দিক দিয়ে পারদর্শী। আমরা খুবই ভাগ্যবান এই রকম একটা দল খুঁজে পেয়ে। ডিপ্রজন্ম : শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে? EXCELR8 : প্রথম যে প্রতিবন্ধকতার কথা বলব তা হলো ওয়ার্কস্পেস এবং যন্ত্রপাতি। আমাদের দেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে এই ধরনের কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে যে সব প্রজেক্ট বানাতে হয় ওইসব বানানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ বা যন্ত্রপাতি কোনটিই নেই। এক একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আমাদের অনেক কিছু নতুন করে বানাতে হয়। বানানোর যন্ত্রপাতি আমাদের ইউনিভার্সিটিতে না থাকায় আমাদের বাইরের বিভিন্ন দোকান অথবা কারখানায় যেয়ে ওইসব বানাতে হচ্ছে। তার উপর বাইরেও যে এসব খুব সহজলভ্য তা নয় কিন্তু। আরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়ন। এক একটা প্রজেক্ট বানাতে যত টাকা প্রয়োজন হয় তা নিজেদের পকেট থেকে দেয়া সবসময় সম্ভব হয় না, কারণ অর্থের পরিমাণও একেবারে কম নয়। তখন ফান্ডিংটা খুবই প্রয়োজন হয় যা পাওয়াই যায় না। ডিপ্রজন্ম : নাসার হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার বিশেষত্ব কী? EXCELR8 : নাসা প্রতিবছর হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মহাকাশে মানব পরিসরের অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী ছাত্রদের নিয়োজিত করার জন্য একটি অভিনব ইঞ্জিনিয়ারিং অভিসন্ধান চ্যালেঞ্জ প্রদান করে। প্রতিযোগিতাটির মূল লক্ষ্য স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা অন্য একটি গ্রহের প্রেক্ষাপটে উপযোগী পৃষ্ঠে চলাচলে সক্ষম একটি গাড়ি তৈরি করা। গাড়িটি পরীক্ষা করার জন্য তারা অন্য গ্রহের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং প্রতিযোগীদের তাদের গাড়ি নিয়ে অন্য গ্রহের আদলে তৈরি করা উঁচু-নিচু বন্ধুর পথ এবং অন্যান্য বাধা পাড়ি দিতে হয়। আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে ১৪টি বাঁধা (অবস্টেকল) এবং ৫টি কাজ (টাস্ক) সম্পন্ন করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে আধা মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত কাজ ছাড়াও তাৎক্ষণিক টাস্কও ছিল। গাড়িটি একজন পুরুষ এবং একজন নারী সদস্যের চালাতে হয়। এই বছর বিশ্বের আনাচে-কানাচে থেকে সর্বমোট ১১৫টি দল নাসাতে তাদের বানানো গাড়ি নিয়ে যায় প্রতিযোগিতা করার জন্য। অন্য কয়েকটি দল আমাদের বেশ প্রশংসা করেছে। নাসা ছাড়া এতবড় একটি আয়োজন এত সুন্দর করে করা হয়ত বা সম্ভব হতো না। ডিপ্রজন্ম : বাংলাদেশে রোবোটিক্সের কেমন সম্ভাবনা দেখছেন? সেটা বৃদ্ধির জন্য একাডেমিক পর্যায়ে কী করা যেতে পারে? EXCELR8 : আমাদের মতে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। যদি তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় তা হলে বাংলাদেশে রোবটিক্সের ভবিষ্যত অনেক ভাল বলা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের স্কুল-কলেজে রোবটিক্সের খুব একটা চর্চা নেই বললেই চলে। কিছু কিছু স্কুল-কলেজ বিজ্ঞানমেলার আয়োজন করে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কিন্তু ওগুলোর পরিসর খুবই কম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রোবটিক্সের চর্চা করার কথা অনেক বলা হলেও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না। তাদের অনুশীলন করার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি অথবা কাজ করার জায়গা সহজলভ্য নয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতকিছুর পরেও, এত অল্প সুবিধা নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রোবটিক্স নিয়ে অনেক ভাল এবং দুর্দান্ত কাজ করছে। রোবটিক্স চর্চা বৃদ্ধিও জন্য একাডেমিক পর্যায়ে কিছু পদক্ষেপ নিলে আশা করা যায় অনেক উপকার হবে, যেমন- নিয়মিত কর্মশালা (ওয়ার্কশপ) আয়োজন করা, রোবটিক্সের কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা, মেন্টর রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও আগামীদিনের কথা মাথায় রেখে স্কুল পর্যায় থেকে অনুশীলন করতে শেখানো জরুরী। ডিপ্রজন্ম : আপনাদের সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা কী? EXCELR8 : আমাদের দলের আরও কিছু প্রজেক্টের কাজ চলছে। সামনের দিনগুলোতে ওইসব প্রজেক্ট শেষ করার চেষ্টা করব। এছাড়া গত ২ বছরের মতো আগামী বছর নাসা হিউমান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২০তে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা আছে আমাদের। এই কম্পিটিশনের কাজ খুব দ্রুত শুরু করব। আমাদের ডিজাইন দেশের বাইরের অনেক দলের পছন্দ হয়েছিল। তারা আমাদের সঙ্গে তাদের ডিজাইন শেয়ার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে আরও উন্নত রোভার তৈরির চেষ্টা করব ২০২০ সালের জন্য। ডিপ্রজন্ম : সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলতরী নামের একটি দল অর্থায়নের অভাবে নাসার প্রতিযোগিতায় যেতে পারছে না। ভবিষ্যতে একই ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় কী পদক্ষেপ নিতে পারেন আপনারা? EXCELR8 : আমাদের বিজ্ঞানে অর্থায়নের প্রবণতা অনেক কম। এ বছরও আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিল। ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ অর্থায়ন বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারলেও এবার সেটা ছিল অপ্রতুল। শেষ মুহূর্তে ঢাকা সিটি ফুটবল ক্লাব এগিয়ে আসে, কৃতজ্ঞতা তাদের কাছে। মঙ্গলতরীর ঘটনা যে কোন বিজ্ঞানভিত্তিক ক্লাব বা দলের জন্য অশনি সংকেত। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ফান্ড থাকা উচিত। না হলে হয়ত একদিন আমাদের সবার বিপদে পড়তে হবে। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান এবং তারুণ্যের কাছে কী প্রত্যাশা করেন? EXCELR8 : এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে তারুণ্যের আইডিয়াগুলো সফল রূপ নেবে এবং সেগুলোই আমাদের দেশকে এগিয়ে নিবে। প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ দেখতে চাই এবং তরুণদের কাছে প্রত্যাশা তারা যেন সেই অনুযায়ী কাজ করে, নিজেদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে।
×