ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হামলা করলে ইরান ধ্বংস হবে

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ২১ মে ২০১৯

 হামলা করলে ইরান ধ্বংস হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে, তবে দেশটি ধ্বংস হয়ে যাবে। রবিবার তিনি ইরানের বিরুদ্ধে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে সেটা হবে ইরানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর হুমকি দেয়া যাবে না।’ তবে ট্রাম্পের এ টুইটকে সুর পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এর আগে তিনি সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাকে অনেকটা খাটো করে দেখছিলেন। ফক্স নিউজে রবিবার প্রচারিত এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবেন না। তবে তিনি এও বলেন, তিনি যুদ্ধ বা সংঘাত চান না। তিনি বলেন, ‘আমি এমন ব্যক্তি না, যিনি যুদ্ধে জড়াতে চান, কারণ যুদ্ধে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে, যুদ্ধে মানুষ মারা যায়।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ইরানের কথিত হুমকি’র প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ও বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন করার পর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকেও সম্প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ট্রাম্পের কেবিনেটের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে বলে মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইরাকী সশস্ত্র গ্রুপের হুমকির কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প প্রশাসন ইরাক থেকে অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং এ অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ও ভারি বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠিয়েছে। রবিবার ইরাকের বাগদাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশনস বিভিন্ন দেশের মিশন ও সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা গ্রিন জোনে কাতিয়ুসা (কধঃুঁংযধ) রকেট হামলা চালানো হয়েছে। তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প নিজেও বলেছেন, তিনি বোল্টনকে থামানোর চেষ্টা করছেন। শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তেহরান যুদ্ধের বিরোধী এবং কারও এটা ভাবা উচিত নয় যে, ইরান সংঘর্ষে জড়াতে পারে। চীন সফর শেষে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত...যতক্ষণ না আমরা যুদ্ধ চাই বা এ অঞ্চলের অন্য কেউ ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ হবে না। গত বছর ট্রাম্প ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা করে আসছে। রবিবার ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস জানায়, ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল হুসেন সালামিও বলেন, ইরান যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে ভীত এবং তাদের সে ইচ্ছাও নেই। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের রবিবার বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না সৌদি আরব। কিন্তু নিজেদের সুরক্ষা তারা প্রস্তুত। এ অঞ্চলে যুদ্ধ এড়াতে তারা সম্ভব সবকিছু করবে বলেও জানান সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবায়ের। তিনি এও বলেন, ‘তবে অন্য পক্ষ যদি যুদ্ধকেই বেছে নেয়, তাহলে নিজেেেক এবং নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় সৌদি আরব সর্বশক্তি ও দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দেবে।’ এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার পটভূমিতে রবিবার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো সৌদি আরবে এক বৈঠকে মিলিত হয়। তারা এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অস্থির তেলের বাজারে কিভাবে স্থিতিশীলতা আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত জানায়, ইরান ও ভেনিজুয়েলায় উৎপাদন ব্যাপক কমে যাওয়া সত্ত্বেও তেল সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে এবং মজুদ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে রবিবার কাতার জানায়, তারা বিশ্বাস করে না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরান এ অঞ্চলে যুদ্ধ চায়। কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের এক ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান আল-মুরাইখি এএফপিকে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুদ্ধ চান না, এবং আমি মনে করি না যে, ইরান যুদ্ধ বা এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যদি আমরা এ অঞ্চলের অদূরদর্শী শাসন থেকে সরে আসি, তবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ মুরাইখি বলেন, সৌদি আরবের ডাকা উপসাগরীয় ও আরব দেশগুলোর জরুরী বৈঠকে দোহাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, দীর্ঘ কূটনৈতিক বিরোধে এ অঞ্চলের সাবেক মিত্রদের থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রয়েছে কাতার। তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। -এএফপি ও বিবিসি
×