ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় দখলমুক্ত হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২০ মে ২০১৯

 বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় দখলমুক্ত হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড় ধস এবং এর সঙ্গে প্রাণহানি রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে সরকারদলীয় রাজনৈতিক ব্যানারের প্রভাব এবং তদ্বির। মূলত এ দুই কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই মহানগরীতে পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতি রোধের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক সদিচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে থমকে গেছে। চিহ্নিত কোন পাহাড়ের পাদদেশ এ পর্যন্ত অবৈধদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করা যায়নি। জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাহাড় অধ্যুষিত চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পট প্রতিবছর ছোটবড় ধসের কবলে পড়ে। এতে মালামালের ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারী, বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্নভাবে সমীক্ষা, তদন্ত, সভা-সমাবেশ শেষে সরকারী-বেসরকারী মালিকানার ১৩টি পাহাড় অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে এর পাদদেশ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আল্টিমেটাম দিয়ে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রদান করে। উচ্ছেদের সর্বশেষ সময় ছিল গত ১৫ মে। কিন্তু সবই নিষ্ফল। এর আগে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতির গ্যাস, বিদ্যুত, পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হলেও সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপক প্রভাব ও তদ্বিরর কারণে প্রশাসন আর এগুতে পারেনি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ, ওয়াসা এবং গ্যাস কর্তৃপক্ষ স্ব স্ব উদ্যোগে সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু এক দফায় প্রচেষ্টা চালানোর পর রাজনৈতিক ব্যানারের ছত্রছায়ায় অবস্থানকারীদের প্ররোচনায় অবৈধ দখলকারীরা রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করে, প্রতিবাদ সমাবেশও সম্পন্ন করে। এতে নিজেদের অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধ করতে অবিলম্বে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবি জানানো হয়। অবরোধের মাধ্যমে মহানগরীর কেন্দ্রস্থল লালখানবাজার, কাজির দেউড়ি, জিইসি মোড়সহ কয়েকটি স্পট অচলও করে দেয়া হয়। বিষয়টি প্রশাসনের জন্য এতই স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়ায় যে, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড়ে বসবাস করছে ৮৩৫ পরিবার। এদেরকে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালীরা। এদের প্রভাব এতই বেশি যে, প্রশাসন আল্টিমেটামের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েও এ পর্যন্ত তাদের কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এদিকে বর্ষা মৌসুম এগিয়ে আসছে। মৌসুম শুরুর আগেই এদেরকে অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে উচ্ছেদের কথা ছিল। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা যায়, এরা আরও শক্ত হয়ে গেড়ে বসেছে। শুধু তাই নয়, এরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত একহাত নিচ্ছে। যেখানে ইন্ধন রয়েছে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন রাজনৈতিক ব্যানারে থাকা প্রভাবশালীদের নিত্য তদ্বিরে তটস্থ অবস্থায়। অর্থাৎ উচ্ছেদের নামে অবৈধ দখলদারিত্ব অবসানে হাত দিলে তা যেন পুড়ে যাবে। বর্তমানে প্রশাসন কর্মকর্তাদের এমন ভীতি পেয়ে বসেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে মতব্যক্ত করা হচ্ছে।
×