ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধনির্ভর আবৃত্তি আখ্যান ‘ঘুম নেই অতঃপর’

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৯ মে ২০১৯

  মুক্তিযুদ্ধনির্ভর আবৃত্তি আখ্যান ‘ঘুম নেই অতঃপর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে সামনে আসে ঘটনাপ্রবাহ। সেই ঘটনাজুড়ে থাকে একাত্তরের রণাঙ্গনের দৃশ্যকল্প। আবৃত্তিশিল্পের আশ্রয়ে উপস্থাপিত হয় বীর বাঙালীর বীরত্বগাথা। সেই গৌরবময়তায় মিশে থাকে মুক্তিযুদ্ধের একেকটি সফল অপারেশনের বিবরণ। সফলতার উল্টো পিঠে আবার পাওয়া যায় দীর্ঘশ্বাস। সেখানে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে স্বপ্নভঙ্গের দুঃখ। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী ধারণ করে নির্মিত আবৃত্তি প্রযোজনাটির শিরোনাম ‘ঘুম নেই অতঃপর’। শনিবার সন্ধ্যায় আবৃত্তি সংগঠন স্বরব্যঞ্জনের পরিবেশনাটির পঞ্চম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফের গ্রন্থ ‘ঘুম নেই’ ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’র যুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে প্রযোজনাটি। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন বাচিকশিল্পী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে হাসান আরিফ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। সেই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ভীষণ হতাশ হয় তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সেই হতাশা ছুঁয়ে যায় সমগ্র জাতিকে। তবে তারপরও থেমে থাকেনি এই যোদ্ধাদের লড়াই-সংগ্রাম। দেশে গণতন্ত্র অর্জনের লড়াই ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় আনার আন্দোলনে তারা রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারা ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়টায় সেতুবন্ধ হিসেবে আবির্ভূত হন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তার আহ্বানেই যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয় সকলে। এ কারণেই প্রযোজনাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন জাহানারা ইমাম। প্রযোজনাটির কাহিনীতে দেখা যায়, বুকভরা স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন বাংলার সূর্যসন্তানরা। জীবন বাজি রেখে অসীম সাহসিকতায় অংশ নিলেন নয় মাসের ভয়াল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। সেই ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হলো স্বপ্নের স্বাধীনতা। অথচ প্রজন্মান্তরে এসে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দেশমাতৃকার জন্য জীবন বাজি রাখা সেসব আত্মত্যাগী মহান মানুষের মুখোমুখি হতে হয় অচিন্ত্যনীয় যুক্তিতর্কের। পাঠ্য বইয়ে যুক্ত হয় স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বিভিন্ন সময়ে নানা আঘাতসহ হত্যার শিকার হতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। বাড়তে থাকে রাজাকার ও তাদের সন্তানদের আস্ফালন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অনৈক্যের কারণে স্বাধীনতার বীরসেনানীদের হতে হয় বিষণ্ণ, ভেঙ্গে যায় স্বপ্ন। অতঃপর আসে যুদ্ধে সন্তান হারানো মায়ের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস। প্রযোজনাটি মঞ্চায়নে আবৃত্তি করেন আট আবৃত্তিশিল্পী। তারা হলেন- মনিরুল ইসলাম, দীপক ঘোষ, আরিফুর রহমান, পংকজ, সৈয়দ আশিক, তন্ময় করিম, সাবিহা সেতু ও কানিজ হৃদি। প্রযোজনাটির আবহসংগীত পরিকল্পনা করেছেন শিমূল ইউসুফ। কোরিওগ্রাফি করেছেন শাহরিন। আলোক সম্পাত করেছেন ওয়াসিম আহমেদ। শব্দ ধারণ করেন মাহবুবুল হক রোমান।
×