ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক মহাসড়ক ও সেতু

উত্তরবঙ্গে ওজন স্টেশন বন্ধ, মাত্রাতিরিক্ত পণ্য নিয়ে চলছে ভারি যান

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৯ মে ২০১৯

  উত্তরবঙ্গে ওজন স্টেশন বন্ধ, মাত্রাতিরিক্ত পণ্য নিয়ে চলছে ভারি যান

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গের জাতীয় মহাসড়কে ওজন পরিমাপক ওয়ে স্কেল (ওজন স্টেশন) কার্যকর না থাকায় যানবাহনে বিশেষ করে ট্রাকে মাত্রাতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়কের ক্ষতি হচ্ছে। সেতুগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে রংপুর পর্যন্ত অন্তত দশটি সেতু ঝুঁকির মুখে। এদিকে যান বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে গতি পরিমাপক যন্ত্রের সার্বক্ষণিক ব্যবহার নেই। কমছে না দুর্ঘটনার হার। জাতীয় মহাসড়ক ঠিক রাখতে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে ওয়ে স্কেল স্থাপনে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর সূত্র জানায় জাতীয় মহাসড়কে অন্তত ২শ’ পয়েন্টে ওয়ে স্কেল (ওয়েব্রিজ) নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক দুই লেনের। নির্মিত হয় আশির দশকের মধ্যভাগে। আয়ুস্কাল শেষ হয়েছে বহু আগে। এরপর এই সড়কের উন্নয়নে শুধু রক্ষণাবেক্ষণই হয়েছে। সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কোঅপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল ও বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ছয় লেনের উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের কাজ এ বছরের শেষের দিকে শুরু হবে। দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের ক্যারেজ ওয়ে চার লেনের। ধীরগতির ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য দুই পাশে দুই লেন যোগ করে ছয় লেন হয়েছে। এই মহাসড়কের ব্রিজগুলো ছয় লেন উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে ভারি যানবাহন চলাচল দিনে দিনে বাড়ছে। ছয় লেনে যানবাহন চলাচল বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ওয়ে স্কেল না থাকলে অতিরিক্ত মাত্রার পণ্য পরিবহনে মহাসড়ক টেকসই হবে না। বছর চারেক আগে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে সরকারীভাবে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ ওয়ে স্কেল স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার পরই তা বিকল হয়। যন্ত্রটি সাড়াতে সময় লাগে প্রায় দেড় বছর। পুনরায় চালুর কয়েকদিনের মধ্যে ফের বিকল হয়। যন্ত্রটি গুদামে রেখে দিয়েছে সওজ। বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, জাতীয় মহাসড়কে আধুনিক অটোমেটিক ওয়ে স্কেল স্থাপনের প্রস্তাবনা ওপর মহলে দেয়া হয়েছে। মহাস্থানগড়ে ওয়ে স্কেল পুনর্স্থাপনের বিষয়েও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ওয়ে স্কেল স্থাপনে সড়কের দুই প্রান্তে দুটি ইয়ার্ড বসাতে হবে। কবে নাগাদ এই ওয়ে স্কেল স্থাপিত হবে এই বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। জাতীয় মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ৫০ থেকে ৬০ টন (কখনও আরও বেশি) ওজনের পণ্য নিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। এর বাইরে দশ চাকার বড় ট্রাক আরও বেশি ওজনের পন্য নিয়ে চলাচল করে। প্রতিটি ট্রাক ২২ থেকে ২৫ টন করে পণ্য পরিবহনের অনুমতি আছে। বগুড়ায় অবস্থিত হাইওয়ে পুলিশের পশ্চিমাঞ্চল জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে বাংলাবান্ধা, পঞ্চগড়, বুড়িমারী, হিলি ও হাতিবান্ধা থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল হয় বেশি। ওই ট্রাকগুলোর বেশিরভাগই ওভারলোডেড থাকে। হাইওয়ে পুলিশকে চোখের দেখায় বুঝে নিতে হয় ওভারলোডেড কি না! কখনও ট্রাকের ডালায় পাথরের দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা মেপে কিউবিক ফিট নির্ণয় করে ওভার লোডেড বোঝার চেষ্টা করা হয়। পঞ্চগড়, বোঁদা, রংপুর ও বড়দরগাহে ৪টি বেসরকারী ওয়ে স্কেল আছে। তাও এই বন্ধ এই চালু অবস্থায় থাকে। প্রয়োজনে ওইসব স্কেলে ট্রাকের পণ্যের পরিমাপ করে প্রসিকিউশনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অতিরিক্ত পণ্য অন্য ট্রাকে পার করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাথর বোঝাই ট্রাক ছাড়াও অন্য পণ্য পরিবহনেও এভাবে পরীক্ষা করা হয়। উৎসে পণ্য বোঝাই ট্রাক পরিমাপ করে পথে নামলে সড়কের ক্ষতি হয় না। তিনি জানান, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে। ঈদের আগে ও পরের সময়ে জাতীয় মহাসড়কের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক গতিনিয়ন্ত্রণ করা হবে।
×