ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ ॥ আজ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা

ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে দিনে লোকসান ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৯ মে ২০১৯

 ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে দিনে লোকসান ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা

রশিদ মামুন ॥ ফের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে গত নির্বাচনের আগেই দাম বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছিল বিপিসি। এখন বিপিসির তরফ থেকে বলা হচ্ছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লোকসানের কারণে বিপিসির দৈনিক লোকসানের পরিমাণ ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বছর শেষে লোকসানের এই অঙ্ক গিয়ে ঠেকবে তিন হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। আজ রবিবার বিদ্যুত জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির যে বৈঠক হবে সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিপিসি বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়কে লোকসানের কথা জানিয়ে আসছে। জ্বালানি বিভাগ থেকেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যদিও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি না মেলায় এতদিন চুপ ছিল বিপিসি। তবে ক্রমাগতভাবে লোকসান দিতে হলে বিপিসি আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিপিসি বলছে প্রতি ব্যারেল গ্যাসোলিন ৮০ ডলারের ওপরে উঠলেই বিপিসির লোকসান গুনতে হয়। এক্ষেত্রে ৮০ ডলার পর্যন্ত ব্রেক ইভেন (লাভ ক্ষতির সমতা বিন্দু) ধরা হয়। এখন প্রতি ব্যারেল গ্যাসোলিন কিনতে হচ্ছে ৮৭ ডলারে। জ্বালনি বিভাগ সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপনের জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে দেখা যায়, গত ৮ মে’র দর অনুযায়ী প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে ৩ টাকা ৮৪ পয়সা এবং প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রিতে ১১ টাকা ৫০ পয়সা লোকসান হচ্ছে। এই হিসাবে প্রতিদিন বিপিসি লোকসান করছে ৯ কোটি ২৯ লাখ ৫ হাজার ৮৭০ টাকা। বছর শেষে এই টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। বিপিসি বলছে ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উর্ধমুখী। এর আগের কয়েক বছর বিপিসি কিছুটা লাভ করেছে। বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, তারা সরকারকে একটি ফর্মুলার কথা বলেছিল। একইভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তেলের দাম নির্ধারণ হয়। তাহলে তেলের মূল্য সমন্বয় নিয়ে এতে জটিলতা তৈরি হবে না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করায় বিপিসিরও লোকসান হবে না। তবে শুরুতে মূল্য সমন্বয়ের এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলেও পরবর্তীতে তা আর এগোয়নি। বিপিসি তাদের কার্যপত্রে বলেছে জ্বালানি তেল বিক্রিতে অব্যাহত লোকসান দিতে থাকলে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্ত হবে। সংস্থাটি বলছে বিপিসি এখন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপ লাইন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা তেল পাইপ লাইন নির্মাণ করছে। এছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের চেষ্টা করছে। ক্রমাগতভাবে লোকসান দিলে বিপিসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব প্রকল্প আর করতে পারবে না। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেন যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপিসি বলছে এর চেয়ে বেশি দামে প্রতিবেশী দেশে ডিজেল এবং পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, তারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে লোকসানের কথা জানিয়েছে। এখন সিদ্ধান্তটি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নিতে হবে। জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান মোঃ শামসুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রতিদিন ৯ কোটি টাকার ওপরে লোকসান করছি। বছর শেষে এই অঙ্কটা বেশ বড়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে লোকসান বহন করা কঠিন। তিনি বলেন, জ্বালানি বিভাগে আমরা বিভিন্ন সময়ে লোকসানের কথা বলেছি। তবে এর ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া বিপিসির এখতিয়ারের বাইরে।
×