ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করমজলে কুমির জুলিয়েট এবার ৩৪ ডিম দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৯ মে ২০১৯

 করমজলে কুমির জুলিয়েট  এবার ৩৪ ডিম দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট / নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা ॥ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে করমজলে দেশের একমাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্রে এবার মা কুমির ‘জুলিয়েট’ ৩৪ ডিম দিয়েছে। প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ডিম দেয় কুমির জুলিয়েট। এরপর ডিমগুলোর কিছু পুকুর পাড়ে কুমিরের তৈরি বাসায় ও বাকিগুলো সরিয়ে কেন্দ্রের ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, কুমির লালন-পালন কেন্দ্রে লোনা পানি প্রজাতির মা কুমির জুলিয়েট শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুকুর পাড়ে তৈরিকৃত বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে ৩৪ ডিম দেয় জুলিয়েট। গত দুই বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে বাচ্চা না ফোটায় এবার ভিন্নপন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ৮টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকি ২৬টি কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফোটানোর জন্য রাখা হয়েছে ইনকিউবেটরে। এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক ও সংরক্ষণকৃত এ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে বলে আজাদ কবির আশা করেন। বিগত দুই বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে কোন বাচ্চা না ফোটায় এবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে জুলিয়েট ১৩ বার ডিম দিল করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। তবে মা কুমির জুলিয়েট গত বছর ১৬ মে ৫০টি ও ২০১৭ সালে ৪৩টি ডিম দিলেও এ সবের একটি ডিম থেকেও দুই বছরে কোন বাচ্চা ফোটেনি। সব ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার করমজলের কুমির জুলিয়েটের পরিবারে নতুন অতিথি আসবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা। এক সময় বাংলাদেশে লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল এই তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু লবণ পানির কুমিরই কোনভাবে টিকে আছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির লোনা পানি প্রজাতির কুমির রক্ষায় পদক্ষেপ নেয় বন বিভাগ। দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন, বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে জন্য সরকারীভাবে ২০০২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি। বন বিভাগের বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনা পানি প্রজাতির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও একটি পুরুষ কুমির রোমিওসহ বড় ৬টি ও ছোট দুইশত কুমির রয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া কুমিরগুলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়। নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে প্রায় শত বছর।
×