ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিকর পলিথিন

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৯ মে ২০১৯

ক্ষতিকর পলিথিন

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পলিথিনের কুফল থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এর সঙ্গে মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধের আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ ও শপিং ব্যাগ জব্দ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তারপরও পলিথিনের আগ্রাসন কিছুতেই কমছে না। পলিথিন এমন একটি উপাদানে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। এর মধ্য থেকে বিষফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে পড়ে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে বাষুদূষণ ঘটে। এখন কাগজ ও পাটের ব্যাগের ব্যবহারই আমাদের পলিথিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে। পাটের ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে সরকারের ব্যাপক নজরদারিসহ প্রচারমাধ্যমগুলোতে (রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা) ব্যাপক প্রচার দরকার। স্লো পয়জন বলতে যা বোঝায়, পলিথিন তাই। পলিথিন ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিন উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে এটির বাজারজাতকারী ও ব্যবহারকারীরা পর্যন্ত জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রয়েছে। এটি ব্যবহারে চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পলিথিন ব্যাগকে চর্মরোগের এজেন্ট বলা হয়। পলিথিনে মাছ, মাংস মুড়িয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পর এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়ে ওঠে। পলিথিনে রং করার জন্য ক্যাডমিয়াম মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোয় ক্যাডমিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফ্রিজে বা স্বাভাবিকভাবে সংরক্ষণের জন্য ঝুঁকিমুক্ত মোটা কাগজ ব্যবহার হয়। তাছাড়া আমাদের দেশে বর্তমানে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্বের যে প্রকট সমস্যা, তার মূলেও রয়েছে পলিথিনের ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও নিয়মিত তদারকির অভাবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের অবস্থায় চলে এসেছে। নিষিদ্ধ হওয়ার প্রথমদিকে এর বিরুদ্ধে ইতিবাচক সাড়া মিললেও ব্যবহার বন্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পলিথিনের যেসব বিকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। এসব বিকল্প দিয়ে এত ব্যাপক চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। ব্যাপক চাহিদার কারণেই ঠেকানো যাচ্ছে না পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন। সবকিছুতেই এর ব্যবহার এত ব্যাপক যে, বিকল্প কোন কিছুই এর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি পলিথিন ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও ভাবতে হবে। উন্নত বিশ্বে নিষিদ্ধ না করেও শুধু পলিথিন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে মুক্ত রাখা হয়েছে। ক্ষতিকর পলিথিন থেকে বাঁচতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এবং ব্যাপকভাবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
×