ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা চাই ॥ চীন ও রাশিয়ার প্রতি ইরান

পরমাণু চুক্তি রক্ষা করুন

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১৯ মে ২০১৯

 পরমাণু চুক্তি রক্ষা করুন

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি রক্ষায় চীন ও রাশিয়াকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে তেহরান। শুক্রবার চীন সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, এই চুক্তি রক্ষা করা না গেলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই জারিফ এই হুঁশিয়ারি দিলেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ও বি-৫২ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে সরাসরি হুমকি মনে করছে তেহরান। খবর এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই ই’র সঙ্গে বৈঠক করেন জাভেদ জারিফ। বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেন, চীন ও ইরানের চিন্তা করা দরকার যে, একক বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তে আমরা ঠিক কিভাবে বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা রক্ষার জন্য কাজ করতে পারি। এর আগে চীনা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের চলমান বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব। চীনের সঙ্গে ইরানের দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। চীন ইরানের অন্যতম তেল ক্রেতা দেশ। চীনের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন দিয়াওতাইতে শুক্রবারের বৈঠক শুরুর আগে জাভেদ জারিফ বলেন, তেহরান চীনকে অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মনে করে। তিনি বলেন, আমি আশা করছি চীন দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং আমাদের উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে উপসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ইরানের পাশে দাঁড়াবে। বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বাক্ষরিত ওই পরমাণু চুক্তি পূর্ণ কার্যকর থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর যে এক্তিয়ার বহির্ভূত একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন তার পূর্ণ বিরোধিতা করে। এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই ই ইরানের পরমাণু চুক্তি রক্ষা ও দেশটির সঙ্গে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ওয়াশিংটন সম্প্রতি চীনের সঙ্গেও নানাভাবে বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি উপসাগরীয় অঞ্চলে অধিক সংখ্যক সৈন্য প্রেরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানী সৈন্যরা ছোট ছোট নৌকায় ক্ষেপণাস্ত্র বোঝাই করার জবাবে ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নিয়েছে। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ইরাকের মার্কিন দূতাবাস থেকে বেশিরভাগ মার্কিন কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা ছিল, ইরাকের মার্কিন দূতাবাসে শিয়া মিলিশিয়ারা হামলা চালাতে পারে। ইরান বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন চুক্তি করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তবে তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে জাভেদ জারিফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পরমাণু চুক্তি রক্ষার জন্য আহ্বান জানান। নিজেদের পরমাণু প্রকল্প হ্রাসে ২০১৫ সালে চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। তবে গত বছর অনেকটা নাটকীয়ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তির শর্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের ওপর পদক্ষেপ না নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানায়। গত সপ্তাহে জাভেদ জারিফ বলেন, শুধু চীন ও রাশিয়া ইরানের সঙ্গে রয়েছে এবং পরমাণু চুক্তির পক্ষে কাজ করছে। আর অন্যান্য দেশ এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ভারত, তুরস্ক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইতালি ও গ্রিসের পর চীন ইরানের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার। চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্রুড ওয়েল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সম্প্রতি ভারত, জাপান ও তুর্কমেনিস্তান সফর শেষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার চীন সফরে যান। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখলেও তেহরান তার প্রধান ক্রেতা দেশসমূহে তেল রফতানি অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।
×