ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পার্বতীপুর জংশন স্টেশনে উন্নয়নমূলক কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৯ মে ২০১৯

 পার্বতীপুর জংশন স্টেশনে উন্নয়নমূলক কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ

শ.আ.ম হায়দার, পার্বতীপুর ॥ পশ্চিম রেলের পার্বতীপুর জংশন স্টেশনে উন্নয়নমূলক কাজে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অরক্ষিত স্টেশনটির পূর্বপার্শ্বে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯শ’ বর্গ ফুট বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। পশ্চিম রেলের প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত টেন্ডারে কাজটি পেয়েছেন সফল ইন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠান কাজটি নিজে বাস্তবায়ন না করে লভ্যাংশ নিয়ে বিক্রি করেছেন পার্বতীপুরের দুই ব্যক্তির নিকট। এরা প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার নন। কাজটি নিয়ে ঘটেছে বহুবিধ ঘটনা। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়সারা তদারকির কারণে মানসম্মত কাজ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজ ও স্বার্থান্বেষীদের বাধারমুখে কাজটি শুরু হলেও শেষ হতে পারেনি। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তাই মাপজোঁক করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ঠিকাদার বিল নিয়ে কেটে পড়েছেন। এ অবস্থয় বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। কথা উঠেছে কাজ শেষ না হওয়ায় কেন ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হলো? এর দায় কে নেবে? ১ নম্বর প্লাটফর্মে ব্রডগেজ সেকশনে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরে এসএসএই (ওয়ে) অফিসের সামনে থেকে দক্ষিণে ইয়ার্ড পর্যন্ত ৭০৮ মিটার করে ২ ও ৩ নম্বর রেল পথ নির্মিত হচ্ছে। কাজটির মূল ঠিকাদার রাজশাহীর বদরুল আলম। তিনি নিজে না করে কাজটি অনুরূপভাবে বিক্রি করেছেন পার্বতীপুরের জনৈক ব্যক্তির নিকট। রেললাইন বসানোর মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ মূল ঠিকাদার না করে কেন অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা করান হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাকশী ব্রিজ ডিপার্টমেন্টের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে প্লাটফর্মের টিনশেড ও ওভার ব্রিজের ছাউনি নির্মাণের কাজ। একই ধারাবাহিকতায় মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক নিয়ে কাজটি করছেন পার্বতীপুরের জনৈক বিপ্লব চৌধুরী। ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মের টিনের ছাউনি খুলে সামান্য কাজ করে ফেলে রেখেছেন। প্লাটফর্মটি এখন খোলা আকাশের নিচে। এ মৌসুমে যে কোন মুহূর্তে প্লাটফম বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। সূত্র মতে, যতগুলো কাজ হচ্ছে কোনটাই মূল ঠিকাদার করছেননা । অভিযোগ উঠেছে এলাকার হোমরা-চোমরাদের কারণে টিকতে না পেরে কাজ বিক্রি করে ঠিকাদাররা পার্বতীপুর থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এ বিষয়ে ভিন্ন মতও আছে। পশ্চিম রেলের প্রধান কার্যালয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনপন্থী নামধারী ঠিকাদাররা কাজ বাগিয়ে লভ্যাংশ নিয়ে বিক্রি করে কেটে পড়ছে। কাজ ভাল কি খারাপ যে ব্যাপারে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তবে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়। বিভিন্নভাবে অভিযোগ ও পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় এখন সকল কাজ স্থগিত। বাধ্য হয়ে রেল তদন্ত টিম গঠন করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও রেলের কাজ তদন্তে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের দায়িত্বশীল কতিপয় কর্মকর্তা হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রতিটি কাজ যেভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তাতে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। যা শুভ লক্ষণ নয়। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোন বিকল্প নেই পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, স্বচ্ছ টেন্ডারের মাধ্যমে সঠিকভাবে মানসম্মত কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝেও নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোন কমপ্রোমাইজ নেই। আর যদি কেউ হস্তক্ষেপ, বাধা বা হুমকি ধমকির আশ্রয় নেয় তবে সে যেই হোক না কেন পার পাবে না। কোন অবস্থায় কাজ অসমাপ্ত রেখে বিল তুলে নেয়ার সুযোগ নেই।
×