ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বৃষ্টি, ঝড় বজ্রপাত- নয় জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৮ মে ২০১৯

হঠাৎ বৃষ্টি, ঝড় বজ্রপাত- নয় জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকার ওপর দিয়ে প্রচন্ড ঝড়োহাওয়া বয়ে গেছে। আর এই ঝড়োহাওয়ার কবলে পড়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অস্থায়ীভাবে তৈরি প্যান্ডেল ভেঙ্গে এক মুসল্লি এবং বাড্ডা এলাকায় দেয়াল চাপা পড়ে তিন পথচারীসহ ঢাকায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও এদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে আরও ৫ জনের মৃত্যুর হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁয় ২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন এবং রাজশাহীতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে শুক্রবারে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে প্রচন্ড ঝড়ের কারণে ঢাকায় না নেমে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস বাংলার দুটি ফ্লাইট। রাজশাহী ও সৈয়দপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট কাছাকাছি সময় ঢাকায় অবতরণের কথা ছিল। সেগুলো ঢাকায় না নেমে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে বলে ওই বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারওয়ার ই জাহান জানান। ঠিক সন্ধ্যার পরপরই রাজধানীর ওপর দিয়ে প্রচন্ড ঝড়, বৃষ্টি বয়ে যায়। রোজাদার মুসল্লিরা তখন ইফতারে ব্যস্ত ছিলেন। ইফতারের সময় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে তৈরি প্যান্ডেল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। প্যান্ডের নিচে চাপাপড়ে একজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২০ জন। নিহত ব্যক্তির নাম শফিকুল ইসলাম (৩৪)। তিনি রাজধানীর পোস্তাগোলা এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তার পিতার নাম মৃত জনাব আলী। প্রচন্ড ঝড়োহাওয়ায় হতাহতদের ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হলে শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান ঢাকা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেন, ইফতারের পরে নামাজ পড়ার জন্য মুসল্লিরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ দিকে প্যান্ডেল ভেঙ্গে পড়ে। এর নিচে চাপা পড়েন অনেকেই। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। আহত লোকজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ঝড়ের কারণে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি দেয়াল ধসে তিন পথচারী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন বুলবুল বিশ্বাস (২৮) ও তপন (২৭)। বুলবুল বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইল বলে জানা গেছে। তিনি রাজধানীতে একটি পরিবহনের ওয়েবিল চেকার হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তপনের বাড়ি নীলফামারীতে। তিনি বাড্ডা এলাকায় চা বিক্রি করতেন। বাড্ডা থানার এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, এ ঘটনায় আহত আরেক যুবক পঙ্গু হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যার ৭টার দিকে রাজধানীর ওপর দিয়ে প্রচ- বেগে ঝড়োহাওয়া বয়ে যায়। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী আগারগাঁওয়ের ওপর দিয়ে ৬৫ কিলোমিটার বেগে এই ঝড়োহাওয়া বয়ে যায়। অপরদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ঝড়ের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ৯৩ কিলোমিটার। হঠাৎ এই ঝড় হাওয়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশ তান্ডব চালিয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে। অনেক স্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ার কারণে অনেক স্থানে তাৎক্ষণিক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘরে ফেরা অনেক মানুষও বেশ বিপাকে পড়ে যায়। এদিকে প্রচন্ড গরম আর দাবদাহের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বৃষ্টিপাত জনমনে প্রশান্তিও এনে দেয়। প্রচন্ড গরমের হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মেলে। বৃষ্টির পর বয়ে যায় ঠান্ডা হিমেল বাতাস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজও আকাশ আংশিক মেঘলা থাতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠান থেকে। গত এপ্রিল থেকেই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটানা দাবদাহ। মাঝে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দুদিন বৃষ্টিপাত হলেও তা কেটে যাওয়ার পর আবার শুরু হয় দাবদাহ। এতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। প্রচন্ড গরমে জনমনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এ অবস্থায় বৃষ্টির প্রতিক্ষায় ছিল সারাদেশের মানুষ। গত ১৩ মে সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত হলেও গরমের অবস্থার কোন হেরফের ছিল না। বৃষ্টির পর আবারও শুরু হয় অস্বস্তিকর গরম। অবশেষে শুক্রবার আরও একদফা বৃষ্টিতে জনমনে কিছুটা হলে প্রশান্তি দেখা দেয়।
×